মহেশখালী প্রেস ক্লাবের সম্পাদককে বেধড়ক পেটালেন মেয়র!

181

মহেশখালীর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মকসুদ মিয়ার হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর ছালামত উল্লাহ। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটে।
জানা যায়, লোহার রড, হাতুড়িসহ ভারী অস্ত্রের আঘাতে ছালামত উল্লাহ’র পুরো শরীর থেঁতলে যায়। কোমর ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাঁড় ভেঙ্গে গেছে। আহত সাংবাদিক ছালামত উল্লাহকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র মকসুদ মিয়াকে প্রধান আসামি করে চারজনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
আহত সাংবাদিক ছালামত উল্লাহ জানান, পৌরসভার কাউন্সিলর হিসাবে পৌরসভার মিটিংয়ে বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করতেন তিনি। এ নিয়ে পৌর মেয়রের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বিভিন্ন সময় পৌর মেয়র ও তার অনুগত লোকজন আমাকে ভয় দেখাতেন। বলতেন ভাগভাটোয়ারা করে আপোসে খাও। কিন্তু আমি তাদের অনিয়ম ও অন্যায়ের কাছে আমার সততাকে বিসর্জন দিইনি বলে আজ আমার এ পরিণতি।
ছালামত উল্লাহ আরো বলেন, মঙ্গলবার রাতে প্রেস ক্লাবে বসে কাজ করছিলেন তিনি। রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মহেশখালী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মকসুদ মিয়া তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে হঠাৎ অফিসে উপস্থিত হন। কিছু বুঝে উঠার আগেই পৌর মেয়র তাকে টানা হেছড়া করে জোর পূর্বক তার ব্যবহৃত গাড়িতে তুলেন। ওই সময় সাংবাদিক চিৎকার দিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলেও প্রভাবশালী পৌর মেয়রের ভয়ে কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। গাড়িতে তুলার পর থেকেই তার উপর নির্যাতন শুরু হয়। এরপর পৌসভার অন্তত চারটি স্পটে নিয়ে গিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়। ওইসব স্পটে আগে থেকেই মকসুদ মিয়ার সশস্ত্র লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, হামলাকারীরা লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে তার পুরো শরীরের বেধড়ক আঘাত করেছে। তিনি বার বার জীবন ভিক্ষা চাইলেও সন্ত্রাসীরা আনন্দ উল্লাস করে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। পরে অর্ধমৃত অবস্থায় তাকে দীঘির পূর্ব পাড়ে ফেলে চলে যায় মেয়র ও তার সহযোগীরা। সেখান থেকে লোকজন তাকে উদ্ধার করে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পৌর মেয়র মকসুদ মিয়া ও কাউন্সিলর ছালামত উল্লাহ’র মধ্যে টানাপেড়েগন চলে আসছিল। সম্প্রতি ছালামত উল্লাহ তার ফেসবুক ওয়ালে পৌর মেয়র মকসুদ মিয়াকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মকসুদ মিয়া ও তার সহযোগীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতিমধ্যে নির্যাতিত সাংবাদিকের ছবি ও হাসপাতালের বেডে তার কান্নকাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। সর্বস্তরের মানুষ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।