মহেশখালীতে ৯৬ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ সরকারের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাক

28

বেশ কয়েকমাস আগে সুন্দরবন এলাকার জলদস্যুদের বিশাল একটি গোষ্ঠী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের পর শনিবার কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর উপকূলীয় এলাকার ১২ সন্ত্রাসী বাহিনীর ৯৬ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। তারা এক আড়ম্বরপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় পুলিশপ্রধান তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার টাকা ও একটি রজনীগন্ধার স্টিক তুলে দেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় একযোগে আত্মসমর্পণ করেন ১২টি সন্ত্রাসী বাহিনীর ৯৬ জন জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগর। এ সময় তাঁরা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১৫৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮৪ রাউন্ড গুলি, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন যন্ত্র জমা দেন। তাঁরা সবাই জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়ার জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগর। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শীর্ষস্থানীয় ১২ জন অস্ত্র তৈরির কারিগর। দৈনিক পূর্বদেশসহ জাতীয় ও স্থানীয় সহযোগী সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শনিবার সকাল ১১টায় মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। একই সঙ্গে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার শপথ নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার টাকা ও ফুল তুলে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এঁদের প্রত্যেককে আরো ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আমরা জানি, এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর র‌্যাবের মাধ্যমে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার ৪৩ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণের পরও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যান অনেক শীর্ষ জলদস্যু ও অস্ত্রের কারিগর। ফলে বিভিন্ন পাহাড় ও সাগর উপকূলে অভিযান বাড়ায় পুলিশ। এ পরিস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে গতকাল তাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কঠোর হুশিয়ারি এবং আত্মসমর্পণকারীদের জন্য যে আশার বাণী শুনিয়েছেন তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘আজকে যাঁরা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এই আত্মসমর্পণের নামে যদি কেউ আগের অবস্থায় ফিরে যান, তাহলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ আরো বলেছেন, ‘স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর যদি আপনারা চান সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। অস্ত্রের কারিগররা ভালো অস্ত্র বানান। তাঁরা যদি চান ওয়ার্কশপ দিতে পারেন। সেখানে সরকার সহযোগিতা করবে। আর যাঁরা এখনো আত্মসমর্পণ করেননি, তাঁদের প্রতি বলছি, আমরা সবার নাম-ঠিকানা পেয়ে গেছি। তাঁরা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসেন, তাহলে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ আমরা মনে করি, সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গত কয়েকবছর ধরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বহারা পার্টি, জলদস্যু, সন্ত্রাসীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার যে সুযোগ এবং তাদের পুনর্বাসনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন তা বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন দেশের নগর থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনপদ যেমন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমুক্ত হয়ে শান্তির আবহে ভরপুর হয়ে উঠবে অপরদিকে দেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ও মানুষের জীবন মানের উন্নতি ঘটবে। আমরা আশা করি, সরকার এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে বিচক্ষণতা ও কৌশলে দেশ থেকে সকল প্রকার দুর্বৃত্ত্যায়ন বিতাড়িত করবে।