মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের উদ্বোধন

37

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি চলছে। চলছে প্রতিমার রঙ-তুলি। এবার চট্টগ্রামে পূজা উদযাপিত হবে ২০৯০টি মন্ডপে। পূজায় থাকছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিকে গতকাল শনিবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয়েছে। মর্ত্যে আগমন করেছেন দেবী দুর্গা।
পুরাণে আছে, অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। চারদিকে অশুভের প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হলেন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজোরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে ঘোটকে (ঘোড়ায়), গমনও হবে ঘোটকে।
পঞ্জিকা মতে, আগামি ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনধ্বনি অনুরণিত হতে শুরু করবে। ৪ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভূজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ৬ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারীপূজা এবং ৭ অক্টোবর মহানবমী শেষে ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব। এদিকে, দুর্গোতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বরণ করতে মন্ডপ গুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সূত্র মতে, নগর ও জেলার ১৫ উপজেলায় এবার সার্বজনীন ও পারিবারিক পূজামন্ডপসহ মোট ২ হাজার ৯০টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ২৫৮টি ও জেলায় ১ হাজার ৮৩২টি পূজামন্ডপ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুরু হয়েছে পূজার তোড়জোড়। চলছে মেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মার্কেটেও ভিড়। প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন লোকজন। বিশেষ করে ছেলেমেয়েদের পোষাক আষাক কিনে নিচ্ছেন। বাজারেও এসেছে নতুন নতুন পোষাক।
সর্বত্র এখন উৎসবের আমেজ। সাজানো হচ্ছে পূজামন্ডপ। প্রতিমার গায়ে পড়ছে শেষ মুহূর্তের রঙ তুলির আঁচড়। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা।
বাজারে উচ্চমূল্যের তালিকায় যোগ হয়েছে প্রতিমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণও। প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামের দাম প্রতিবছর বাড়ছে।
দেখা যায়, মন্ডপগুলোতে সাজানো হচ্ছে মনোরমভাবে। এখন থেকেই লাইটিং করা হচ্ছে। প্রতিটি মন্ডপ এলাকাও সাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন আইটেম ও আদলে সাজানো হচ্ছে মন্ডপগুলো।
এবার পূজা উপলক্ষে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মন্ডপগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ। পূজার নিরাপত্তায় অন্তত ৫ হাজার পুলিশ ও র‌্যাব দায়িত্ব পালন করবে। মন্ডপগুলোতে পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুরিশ আশেপাশে থাকবে। টহলে থাকবে র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দর গোলাম ফারুক বলেন, পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে থাকবে। প্রয়োজনে তল্লাশি চালাবে।
নগরীতেও একই ধরনের ব্যবস্থা থাকছে। পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। কড়া নজরদারি থাকবে প্রতিটি মন্ডপের উপর। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও দায়িত্ব পালন করবে।
র‌্যাব সদস্যরাও পূজার নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবে। টহলে থাকবে র‌্যাবের টিম।
র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, নির্বিঘ্নে যাতে পূজা উদযাপিত হয় সেজর‌্য র‌্যাব কাজ করে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে বোয়ালখালীর কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে চন্ডীর উদ্ভবস্থল ও দুর্গাপূজার উৎপত্তিস্থল মেধস আশ্রমে মহালয়া উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকের বাদ্যে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বালন, চন্ডীমন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জেলার ১৫ উপজেলার শারদীয় দুর্গোৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন মেধস আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ বুলবুলানন্দ মহারাজ।