মহাবিশ্বের মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

144

মহামানবতার সেবার জন্য মহান আল্লাহ পাক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৃথিবীতে প্রেরণ করে রবিউল আউয়াল মাসে। পৃথিবীতে এসে তিনি রহিত করলেন শোষণ-নির্যাতন। মানুষকে দেখালেন আলোর পথ। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে তাঁকে সম্বোধন করেছেন, ‘সিরাজাম মুনিরা’ (উজ্জ্বল প্রদীপ)।
রাহমমাতুল্লিল আলামিন হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ জাল্লে শানহু এতো উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন যে, মানুষ তাঁর প্রশংসা করে শেষ করতে পারবে না। পবিত্র কোরানে ইরশাদ করেছে, ‘ওয়ারাফানা লাকা যিক্রাকা’ অর্থাৎ আমি আপনার (রাসুল) স্তুতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।
কোরানে পাকের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান মানের বর্ণনা নিহিত। তাই হযরতের সহধর্মিণী উম্মুল মোমেনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোরআনই আল্লাহর নবীর চরিত্র।


বিজ্ঞ শিক্ষকের ছাত্রও বিজ্ঞ হয়। মহানবীর শিক্ষক স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। সকল জ্ঞানীগণ মাখলুক থেকে শিখেই জ্ঞানি হয়েছে। তাঁরা মাখলুক (সৃষ্টির) এর ছাত্র। এক মাত্র আমাদেরই প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালেকের (স্রষ্টার) ছাত্র। তাই অন্যদের চেয়ে তিনি ব্যতিক্রম। হাদিসে পাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আইয়ুকুম মিস্লি’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ ? অন্যত্র বর্ণনা আছে, ‘আমি তোমাদের কারও মত নই’। তাঁর মত কেউই হতে পারে না। আমাদের প্রস্রাব পায়খানা নাপাক অথচ হুজুর পাকের প্রস্রাব পায়খানা উম্মতের জন্য পাক। আমাদের নিদ্রা ওয়ুা ভেঙে দেয়, কিন্তু তাঁর নিদ্রায় ওয়ু ভাঙে না। আমরা সবাই শুনে বেহেশত দোযখ এবং আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি, অথচ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তাহাজজুদসহ ছয় ওয়াক্ত ফরজ। সবার জন্য ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি কিন্তু হুজুর পাকের (দ.) এর জন্য চারটি , অর্থাৎ তাঁর উপর যাকাত ফরজ নয়। তার সম্পদ ইসলামের সম্পদ। তাই তিনি স্বতন্ত্র, অন্য ধরনের আধ্যাত্মিক মহামানব।
প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেম আল্লাহ প্রাপ্তির পূর্বশর্ত। নাজাতের উসিলা। আল্লাহ পাক তাঁকে ভালোবেসে ‘হাবিবুল্লাহ’ (আল্লাহর বন্ধু) খেতাবে ভূষিত করেছেন। পবিত্র কোরআনের সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘(হে নবী!)’ আপনি বলে দিন যে, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমায় অনুসরণ কর। আল্লাহপাক তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমূহ মাফ করবেন এবং আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।’
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সাপ দ্বারা নিজেকে দংশন করানোর ঘটনা আত্মহত্যার চেষ্টা নয় বরং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা ও খাঁটি ইবাদত। ওযায়েস ক্বরণী (রা.) ইচ্ছাকৃত স্বীয় বত্রিশ দাঁত ভেঙে ফেলা গুনার কাজ নয়, সাত্তয়াবের কাজ। আবু উমাইয়া জমরী (রা.)’র মুখ হতে জোরপূর্বক কুফরী শব্দ বের করানো তার কুফরী ছিল না। খায়বরের প্রান্তরে হযরত আলী (রা.)‘র আসরের নামাজ কাজা করার ঘটনা পাপের ছিল না, পুন্যের ছিল। কারণ এসকল কাজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা ছিল এবং মহানবী (দ.) তাদের কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসেন বলেন আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, আমরা নবীর সমস্ত কথা আমার কথা। তিনি আমার কথা ব্যতীত কিছুই বলেন না’। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাজও আল্লাহর কাজ। বদরের যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য ছিল ৩১৩ জন, কাফির সৈন্য একহাজারের অধিক। মাহবুবে খোদা হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মুষ্টি বালি হাতে নিয়ে দোয়া পড়ে বালিতে ফু দিয়ে কাফির সৈন্যদের দিকে নিক্ষেপ করলেন। কাফিরদের চোখে বালি পড়ে অন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুসলমানদের বিজয় হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক কোরানে পাকের আয়াত নাযিল করেন, ‘( হে রাসুল!)’ আপনি যখন কাফিরের প্রতি বালি নিক্ষেপ করেন তখন প্রকৃত পক্ষে আপনি নিক্ষেপ করেননি, বরং তা আল্লাহ পাকই নিক্ষেপ করেছেন।
প্রিয় সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ মহব্বতের অসংখ্য প্রমাণ কোরান-হাদিসে বিকৃত রয়েছে যা, সংক্ষিপ্ত পরিসরে লেখা সম্ভব নয়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসা আল্লাহর আইন। এই আইন প্রতিষ্ঠা করতে আল্লাহর হাবীর ইরশাদ করেছেন, ‘যে পর্যন্ত আমি তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও নিজের প্রাণের চেয়ে অধিক প্রিয় না হবো ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না।
প্রিয় নবী মাহবুবে খোদা হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন সমগ্র সৃষ্টির রহমত হিসেবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘ওয়াসা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামিন’ অর্থাৎ আমি আপনাকে সৃষ্টি করেছি মহাবিশ্বের রহমত হিসেবেই’।
প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ধর্ম-বর্ণ,ধনী-গরিব, আমির-ফকির, আরব-অনারাব সকলের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত। তাঁর কাছে মানুষ হিসেবে সকলেরই সমান। তিনি বলেছেন, আল্লাহর কাছে সেই শ্রেষ্ঠ, যার কর্ম শ্রেষ্ঠ, উন্নত। তাই কৃষ্ণক্রীতদাস হযরত বেলাল (রা.) কে তিনি মর্যাদা দিলেন ইসলামের প্রথম মুযাজিজনের। তিনি আইয়ামে জাহিলিয়াতের রন্ধে রন্ধে যুগ-যুগান্তর সঞ্চিত সমস্ত পাপাচার ও গøানিকে দূর করে মানুষকে উপহার দিলেন এক চিরন্তর কল্যাণ ব্যবস্থা, যার প্রভাব ছিলো সূদুর প্রসারী। ফিলিপকে, হিট্টির ভাষায় : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর মাত্র একটি শাসনামলের শেষপাদে মুসলিম সাম্রাজ্য অক্সাস থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরটিস মাইনর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। শূন্য অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করে মুসলিম আরবীয় খেলাফত এ সময় বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিলো বিসকে উপসাগর থেকে সিন্ধু পর্যন্ত এবং চীন সীমান্ত ও ওরাল সাগর থেকে নীল নদের অববাহিকা পর্যন্ত এবং আরবের মরু-দুলালের নাম মহামহিম আল্লাহর নামের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে নিয়ে পাঁচবার দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পশ্চিম-মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখÐের হাজার মসজিদের মিনার থেকে ধ্বনিত হতো। (সূত্রঃ হিস্টরী অব দি আরাবস, পৃষ্ঠা : ১৭৫ ও ২১৫) আর এভাবেই শুধু আরব নয়, বিশ্বের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ মহান রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের করুণাধারায় সিক্ত হয়ে নবজীবন লাভ করার সুযোগ পেয়েছিল।

লেখক : কলাম লেখক ও রাজনীতিক