মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ

114

স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে গর্বিত জাতি আজ ৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ প্রত্যুষে রাজধানীতে একত্রিশ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।-খবর বাসসের
এদিকে, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। এসময় সারাদেশে একযোগে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে। বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সম্ভব হলে বাংলাদেশের সাথে একই সময়ে এবং অন্যান্যরা একই দিনে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করবে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান উঁচু ভবনসমূহে বৃহদাকারের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে।
ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল বাদ্য বাজাবেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ (অ্যাম্পিথিয়েটার) থেকে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এবং সদরঘাট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত নৌপথে বিশিষ্ট শিল্পীগণের অংশগ্রহণে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশিত হবে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। দেশের সকল হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে প্রতিষ্ঠান ও শিশুদিবা যতœ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দর এবং ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশাল ও চাঁদপুর বিআইডবিøউটিএ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ বিকাল ২টা হতে ঐদিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশুকিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে সকালে কুচকাওয়াজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ, জাতীয় সংগীত পরিবেশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল-দীর্ঘ নয় মাসে মরণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার দামাল সন্তানেরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দুই দিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ও সকাল ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
এছাড়াও আগামী ২৭ মার্চ বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ আহবান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আমি দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
ঐতিহাসিক এই দিনে তিনি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের স্মরণ করেন, যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে জাতি স্বাধীনতা পেয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধুসহ সকল স্তরের জনগণকে স্মরণ করেন, যাঁরা বাঙালির অধিকার আদায় ও মুক্তিসংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁদের অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো তিনি স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতীয় জীবনে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের পাশাপাশি বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ মহাকাশেও নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। জাতি ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্যের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।
আবদুল হামিদ বলেন, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়, বঙ্গবন্ধুর এ আদর্শ অনুসরণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও দেশের অর্জন প্রশংসনীয়। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও তাঁদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স প্রেরণের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রেখে চলেছেন। এতদসত্তে¡ও স্বাধীনতার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। উন্নয়নকে জনমুখী ও টেকসই করতে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুনভাবে জাতীয় সংসদ ও সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। সংসদকে কার্যকর করতে এবং জনকল্যাণে সরকারের উন্নয়ন ভাবনাসমূহের বাস্তবায়নে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ হবে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। এ জন্য সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজন সকলের আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।
তিনি বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করতে দলমত নির্বিশেষে সকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, এটাই হোক স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অঙ্গীকার।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী এবং প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ বাঙালির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙার দিন। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তিনি বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান, যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে জাতি প্রিয় স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
এছাড়া শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জিত হয়েছে। জাতীয় চার নেতাকে শ্রদ্ধা জানান, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সম্মান জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। সাথে সাথে সব বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন ও ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অকৃপণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তারা ১৯৭০ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য হয়। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উল্টো নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ তিনি বাঙালি জাতিকে শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে অতর্কিতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। জাতির পিতার নির্দেশে পরিচালিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
তিনি বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আজ জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করছি। গত ১০ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, উন্নয়নের ৯০ ভাগ কাজই নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার হত্যকারীদের বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য পরিচালনা করে বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ একটানা সরকারে থাকার কারণে তৃণমূলের জনগণ আজ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম পাবে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছে। বর্তমান সরকারের ওপর দেশের মানুষ যে দৃঢ় আস্থা রেখেছে, সরকার তার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন করবে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবে।
তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার আহবান জানিয়ে বলেন, আসুন দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। গড়ে তুলি জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। আজকের এ ঐতিহাসিক দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।