মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদল নেতাদের ‘মিডিয়া ভীতি’

27

সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মিডিয়ার সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে চলছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। শুধু নির্ধারিত দলীয় ঘরনার সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ছাড়া বাকিদের কর্মসূচি কভারেজের জন্য ডাকাও পড়ে না। যদিও কর্মসূচি পালনের পর প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদল। মূলত নিজেদের কর্মসূচিতে জনবিচ্যুতিকে সামনে না আনতেই মিডিয়া ভীতি যুবদলের। আর নিজেদের মতো প্রচার পাওয়ার জন্য কর্মসূচির পরে মিডিয়া প্রীতি দেখা যায় সংগঠনটির মধ্যে।
গতবছরের জুনে গঠন করা হয় নগর যুবদলের কমিটি। প্রায় পনের বছর পর গঠন হওয়া এ কমিটি শুরু থেকেই মিডিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন মামলা থেকে বাঁচতে ও গ্রেপ্তার এড়াতে এমন কৌশলের আশ্রয় নেয় সংগঠনটি। বর্তমানে মামলার ভয় ও গ্রেপ্তার প্রবণতা অনেকটা কাটিয়ে উঠা গেলেও প্রচারে আসতে পারছে না যুবদল। প্রচার-প্রচারণার জন্য বিপরীত দলের সংগঠনের দৌড়ঝাপ থাকলেও আড়ালে রয়েছে যুবদল।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় নির্দেশিত মানববন্ধন কর্মসূচিতেও মিডিয়া ভীতি দেখা গেছে। এ ভীতির মূলে যুবদলের কার্যক্রমে জনবিচ্যুতিকে মনে করা হচ্ছে। নগর যুবদলের মতো একই অবস্থা চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের।
এ বিষয়ে নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তি বলেন, মানববন্ধন পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। সারাদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এটা আমার একক কোনো কর্মসূচি না। আপনাদের (সাংবাদিকদের) না জানানোর কোনো কারণ নেই। জানালে তো আপনাদের সহযোগিতা পাবো। হয় তো কোনো গ্যাপ হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমার যতগুলো কর্মসূচি হয়েছে তাতে দুই, চার, পাঁচ হাজারের নিচে লোক হয়নি। আজকেও (শুক্রবার) কমপক্ষে পাঁচ হাজার লোক হয়েছে। মিডিয়ার কেউ না কেউ থাকেই। পুলিশের অনুমতি নিয়ে আমরা কর্মসূচি পালন করি। জানালে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই, লাভই আছে।
নগর যুবদল গতবছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে। এরপর থেকে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কিছু কার্যক্রম করলেও কর্মসূচি পালনে নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেনি। নানাভাবে হয়েছেন বিতর্কিতও। কেন্দ্র নির্দেশিত কিছু কার্যক্রম পালনে সক্রিয় থাকলেও থেকেছেন মূল সংগঠনের কার্যক্রমের অনেক বাইরে। আবার বিএনপি যখন নিজেদের কর্মসূচি প্রচার-প্রচারণার জন্য তৎপর তখন তখন উল্টোপথে হাঁটছে যুবদল। উল্টোপথে যাত্রার মূলে রয়েছে যুবদলের বাস্তব চিত্র যেন সংবাদ মাধ্যমে না আসে। সংবাদকর্মীরা উপস্থিত থাকলে জনউপস্থিতি, শৃঙ্খলাসহ যাবতীয় বিষয় উঠে আসবে সংবাদ মাধ্যমে। এ ভীতি থেকেই মূলত সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে দূরে থাকছে যুবদল। একইভাবে উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবদলেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে উত্তর-দক্ষিণ জেলা যুবদলও অংশ নেয়। কখনো আলাদা আবার কখনো যৌথভাবে পালন করা হয় কর্মসূচি। এসব কর্মসূচিতে জমায়েত নামেমাত্র। যুবদলের এই বেহাল দশা মিডিয়ার সামনে যেন উপস্থাপন না হয় সেজন্য কর্মসূচির পরে নিজেদের বানানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেদের ‘জাহির’ করা হয়।
এ বিষয়ে উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান জসিম বলেন, আমাদের কর্মসূচিগুলো মিডিয়াকে জানানোর জন্য দপ্তর সম্পাদককে বলেছিলাম। ওনারা হয়তো মনে করে, বর্তমানে স্যোসাল মিডিয়া অনেক শক্তিশালী। সেজন্য ফেসবুক বা স্যোসাল মিডিয়ার প্রতি বেশি নজর দেয়। তবে অনুষ্ঠানের প্রেস রিলিজ পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আগে থেকে জানাজানি হলে কিছু সমস্যাও হয়। নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ অনুমতি দেয় না। অনুমতি ছাড়া করতে হয়। কিছুটা ভয় তো থাকেই।
মূল সংগঠন বিএনপি প্রতিটি কর্মসূচি প্রচারের জন্য যখন মিডিয়ার দারস্থ হয়, তখন অঙ্গ সংগঠনের এমন বিরূপ আচরণ। তবে কর্মসূচি শেষে সংবাদ মাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচারে ভুল হয় না যুবদলের। কর্মসূচিতে হাতে গোনা লোক সংখ্যা থাকলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেটা ‘বিশাল’ আকার পায়। এমন অনেক কর্মসূচি আছে যেখানে উপস্থিত থাকা সবার নামও দেওয়া হয় প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে কথা বলতে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহানকে ফোন করা হলে তিনি বাইরে থাকার অজুহাতে দেখিয়ে পরে ফোন করবেন বলে রেখে দেন। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ হয়নি।
গতকাল যুবদলের কেন্দ্র ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর ও উত্তর জেলা যৌথভাবে পালন করে। এ কর্মসূচিতে দুই থেকে তিনশ মানুষের উপস্থিতি হয়। এতেই বুঝা যায়, যুবদলের জনসমর্থন। অন্যদিকে শুরু থেকেই দলীয় কার্যালয় কেন্দ্রীক রাজনীতি পরিহার করার ঘোষণা দেয় নগর যুবদল। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কার্যক্রম নিলে তা কিছুটা জনসমর্থন লাভ করে। তবে তা অল্পতেই ঝিমিয়ে পড়ে।
মানববন্ধনে উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর যুবদলের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মানববন্ধনে আমাদের তিন থেকে চারশ মানুষের উপস্থিত ছিলো। কেন্দ্র ঘোষিত সকল কার্যক্রমে আমাদের উপস্থিতি আছে। মহানগর যুবদলের সকল কার্যক্রম দৃশ্যমান।