মহাজোটের মহা-প্লাবনে ভেসে গেছে কর্নেল অলি

153

সারা দেশের ন্যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে মহাজোটের মহা-প্লাবনে ভেসে গেছে ৬ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ ড. কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। যে সব কারণে তিনি হেরে গেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ছয়বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে বিপুল ভোটে হেরে যান। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরী। ২০ দলীয় শরীক দল এলডিপি’র সভাপতি কর্ণেল অলি ছাতা প্রতীক নিয়ে ২২ হাজার ২২৫ ভোট পান। মহাজোটের মহা-প্লাবনে প্রথমবারের মত পরাজয় বরণ করেছেন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী অলি। ১৯৭৬ সালে চন্দনাইশ থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ আসনে ১৯৮১ সালে কর্ণেল অলি উপ-নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে ৭ মে তৃতীয় সংসদ, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমেদ। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ, একই বছর ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কর্ণেল অলি জয়লাভ করেন। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চন্দনাইশ আসন ছাড়াও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকেও নির্বাচিত হন। ২টি আসনে জয়লাভ করার কারণে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আসন ছেড়ে দিলে, তার সহধর্মিনী মমতাজ অলি উপ-নির্বাচনে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় কর্ণেল অলি নির্বাচিত হন। একই সালের বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের মেয়াদের শেষ দিকে কর্ণেল অলি বিএনপি থেকে বেরিয়ে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলডিপি থেকে ছাতা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে নিজ দলীয় প্রতীক ছাতা নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। অবশেষে বিপুল ভোটে প্রথমবারের মত নৌকার প্রার্থীর কাছে হেরে গেলেন অলি। বহুল প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনে কর্ণেল অলি জয়ী হওয়ার আশাবাদী ছিলেন নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলে ছিলেন, শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে তিনি থাকবেন। শেষটাও দেখে যাবেন। অবশেষে, ভোটের দিন দুপুরে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত বাড়িতে অপেক্ষা করেছিলেন। কর্ণেল অলির এ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতারা বলেন, তিনি প্রথমত ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষ প্রতীক না নেয়ায় বিএনপির একটি অংশ নির্বাচনে তার সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি।
নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে থেকে নির্বাচনী মাঠে অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। বিগত ১০ বছর কর্ণেল অলি ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছিল। সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেনি নেতা-কর্মীদের। তাছাড়া এলডিপি থেকে বেশকিছু নেতা-কর্মী বিএনপিতে চলে যায়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত, তিনি কোন জোট থেকে নির্বাচন করবেন এ নিয়ে মহাজোট ও ২০ দলীয় জোট নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল সংশয়। নির্বাচনী প্রচারণাকালে গত ১৫ ডিসেম্বর সাতকানিয়া এলাকায় তার প্রথম ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি গণসংযোগ করাকালে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন।