মসজিদ-মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিল

57

রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মামলা করে। গতকাল মঙ্গলবার এ ইস্যুতে এ আদালতে শুনানি শুরু হয়। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রোহিঙ্গারা ‘গাম্বিয়া, গাম্বিয়া’ স্লোগান দেয়। এতে উখিয়ার রোহিঙ্গাক্যাম্পগুলো মুখর হয়ে উঠে। সাইফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি তার টুইটে এ স্লোগানের ভিডিওচিত্র তুলে ধরেন।
তবে প্রশাসনের কঠোর নির্দেশনা থাকায় সংক্ষিপ্ত সময়ে জমায়েত শেষ করে ক্যাম্পের মসজিদ ও মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে রোহিঙ্গারা। এর আগে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামে সংগঠন। কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই ক্যাম্পগুলোতে ছোট পরিসরে দোয়া মাহফিল হয়।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অং সান সু চির সমর্থনে মিয়ানমারে বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করেছে বৌদ্ধরা। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ছাড়াও এমন তথ্য জানিয়েছে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এআরএসপিএইচ’র নেতারা।
উল্লেখ্য, গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর শুনানিতে বক্তব্য রাখে গাম্বিয়া। আজ ১১ ডিসেম্বর বক্তব্য দেবে মিয়ানমার। ১২ ডিসেম্বর এক সঙ্গে শুনানিতে অংশ নেবে দুই দেশ।
রোহিঙ্গা নেতারা জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে উখিয়ার কতুপালং, লম্বাশিয়া, সীমান্তের শূন্য রেখা, বালুখালী, তাজনিমারখোলা, ময়নারঘোনা এবং শফিউল্লাহ কাটাসহ বেশকিছু ক্যাম্পের মসজিদ, স্কুল ও মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিল হয়। এতে শত শত রোহিঙ্গা ও শিশুরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’র (এআরএসপিএইচ) এক নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিচারে রায় পাওয়ার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল করছি। ন্যায়বিচার পেতে আল্লাহ যেন সহায় হন।
বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা নুরুল বাশার বলেন, রোহিঙ্গাদের এটি একটি বড় অর্জন। গণহত্যার বিচারে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তার জন্য গাম্বিয়াকে সাধুবাদ জানাই। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করা। আজ তা হচ্ছে।
তুমব্রু শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যেন আত্মীয়-স্বজন হত্যার সুবিচার পাই। আমরা সবাই এ প্রত্যাশায় আছি।
বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। তবে বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ বিচার নিয়ে যাতে ক্যাম্পে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টরা সর্তক রয়েছে।