মন্ত্রী থাকতে কখনো কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে দেখা হয়নি

73

নগরীর বায়েজিদ থানাধীন সেনানিবাসের মেইন গেইটের বাম পাশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই একর জায়গার ওপর নির্মিত আধুনিক উদ্যানটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পার্কটি উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন উপস্থিত হয়েছেন এজন্য তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ সময় তিনি উন্নয়নের জন্য মেয়রের কথা মতোই পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ পার্কটির উন্নয়নে মেয়রের সাথে কথা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি আমার কাছে ১১ কোটি টাকা আছে। মেয়র বললে আমি কাজ শুরু করে দেবো। তিনি কাজ শুরু করার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। কাজ শেষ করে পার্কটি আমি তাকে বুঝিয়ে দেবো।
তিনি আরো বলেন, প্রথমবার তিন বছর এবং পরের বার পাঁচ বছর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ছিলাম। এই সময়ে কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে আমার দেখা হতো না। ঠিকাদাররা দেখা করতে চাইলেও আমি সেই সুযোগ দিতাম না। গণপূর্ত অধিদপ্তরের যে টেন্ডার প্রক্রিয়া আছে তা অনুসরণ করে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোয়েস্ট হয়েছে সে প্রতিষ্ঠানই কাজ পেয়েছে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, অচিরেই ডিসি হিলকে পার্ক করার কাজও শুরু করবো। মেয়রের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। তার সহযোগিতায় চট্টগ্রামে অচিরেই আরো তিনটি খেলার মাঠ করা হবে। এ সময় মেয়রকে নগর পিতা এবং নিজেকে কর্মী দাবি করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে আমার নেতা আমার অভিভাবক বলে সম্বোধন করেন। মেয়র বলেন, আমি যে অপপ্রচারের শিকার হয়েছি, তা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। জাম্বুরি মাঠ ও জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে গণপূর্ত আর মোশাররফ ভাইয়ের মনে যে কষ্ট আছে, এই মামলাগুলো কিন্তু আমি করিনি। মামলাগুলো সাবেক মেয়র মহোদয়রা করেছেন। আমার আমলে কোনো কিছু হয়নি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে যে মেগা প্রকল্প, পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সেটি পূর্ণাঙ্গ কিনা আমারও সন্দেহ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানি পর্যন্ত শহরে প্রবেশ করছে। এটা আরো পূর্ণাঙ্গভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি করে যদি করা যায় ভালো হবে। অন্যথায় এই টাকাগুলোর অপচয় হবে বলে আমিও মনে করি।
এই বিষয়ে যদিও আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আলোচনা করতে করতে যেটুকু জানা হয়েছে, সে কারণে এই কথাটা বললাম। মেগা প্রকল্পের টাকাগুলো জনগণের। এত টাকা ব্যয় করেও যদি জলাবদ্ধতা দূর করা না যায়, তাহলে এর চেয়ে কষ্টের কোনো কিছু হবে না। তখন তো নগরবাসী আমাদেরকে ভুল বুঝবে।
তিনি বলেন, যখন আমি দায়িত্ব নিয়েছি, তখন সিটি করপোরেশন নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। এখানে কোনো প্রবিধানমালা ছিল না। আমরা প্রয়োজনীয় লোকবলও নিয়োগ দিতে পারিনি। সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার দেনা নিয়ে শুরু করেছি। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব খুব বেশি জায়গা নেই। অতীতে গণপূর্ত বা অন্যান্য সংস্থা থেকে সিটি করপোরেশনের ব্যবহারের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে। হয়তো দেখা গেছে একটা কাজে ব্যবহারের জন্য অনুমতি নিয়েছে, কিন্তু সেখানে হয়েছে অন্যকিছু। এগুলোর তো তথ্য-প্রমাণ আছে। এসব বলতে গেলে অনেকে অনেক কিছু মনে করবেন।
এর আগে বক্তব্য দিতে উঠে সংসদ সদস্য মইনউদ্দিন খান বাদল গণপূর্ত অধিদফতরের ঠিকাদারদের হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া নিয়ে সমালোচনা করেন। এ সময় প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় গণপূর্ত থেকে ‘গণ’ শব্দটি বাদ দেওয়ারও দাবি জানান।
বাদলের বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণপূর্ত’র বদনাম যেমন আছে, তেমনি সুনামও আছে। এই যে সবুজ উদ্যান, এটি করতে গিয়ে ১২ কোটি টাকার মধ্যে ৪ কোটি টাকা থেকে গেল, যেটি ঠিকাদাররা সরকারকে ফেরত দিয়েছে। ঠিকাদাররা সেটি ফেরত না দিয়ে রেখে দিতে পারতেন। এটা কি ভালো দিক নয়?
সংসদ সদস্য বাদল বলেন, ইয়াবা পেলে র‌্যাব-পুলিশ ক্রসফায়ার দেয়। তাহলে প্রধান প্রকৌশলী ও একেক সাহেবরা যদি দুই হাজার কোটি টাকা করে খায়, তাহলে তাদের চারবার ক্রসফায়ার দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা দুই ধরনের করতে হবে। প্রথমত কোন কাজটা আগে করবো, কোন কাজটা করবো না। দ্বিতীয়ত কোন কাজটা করলে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে। কালুরঘাট সেতুর কথা বলতে বলতে গলার পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। নেত্রী বলছেন, করবো। আমি বলেছি, মানুষ এখন আর আমার কথা বিশ্বাস করে না। তখন মোশাররফ ভাইকে বললেন, আপনি বলুন, ব্রিজটি আমি করে দেব।
তিনি বলেন, সংসদে বলতে বাধ্য হলাম, কী উন্নয়ন করলেন চট্টগ্রামে। জবাব আসে, ফ্লাইওভার। মোশররফ সাহেব তো ইঞ্জিনিয়ার, তিনি তো বলছেন এসব ফ্লাইওভার দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমি স্পিকারকে বললাম, চট্টগ্রাম হচ্ছে একমাত্র শহর, যেটার নিচেও পানি থাকে, উপরে ফ্লাইওভারেও পানি থাকে। বড় বড় পরিকল্পনা নেবেন, বড় বড় গিফট নেয়ার জন্য, এটা তো ঠিক না।
মেয়র সংসদ সদস্য বাদলের উদ্দেশে বলেন, বাদল ভাই পদত্যাগের দরকার নেই। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন, কালুরঘাট সেতু হবেই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী প্রমুখ।