মধুমাসের রসালো ফলে ভরপুর বাজার

93

পল্লী কবি জসিমউদ্দীন তার মামার বাড়ি কবিতায় লিখেছিলেন ‘ঝড়ের দিনে মামার দশে আম কুড়াতে সুখ/পাকা আমের মধূর রসে রঙিন করি মুখ’। এ কবিতা জ্যৈষ্ঠ মাস তথা মধুমাস মাসকে মনে করিয়ে দেয়। যদিও মাত্র একদিন আগে এ মাসটি শেষে হলো। তবুও রকমারি দেশি ফলে দেশি রসালো ফলে ভরপুর বাজার। আর এসব পাকা ফলের মৌ মৌ গন্ধ যেন সর্বত্র। দিনদিন দাম কমছে, বেচাকেনাও জমে উঠেছে বেশ। দামও ক্রেতাদের নাগালে রয়েছে বলে জানা গেছে। উত্তর চট্টগ্রামের হাট-বাজার তথা হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার গুলোতে মৌসুমি দেশি ফল বিক্রি হচ্ছে। এসব উপজেলার বাজার ছাড়াও পাড়া-মহল্লা, রাস্তাঘাট, ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় বড় সুপারশপ এখন রসালো ফলে ভরা। ভ্যানেও এ সব ফল বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা। এসব ফল কেবল খেতে যে মজা তা নয়, এগুলো ভরা অনেক পুষ্টিগুণে। হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সামনে ফল বিক্রেতা মোহাম্মদ আইযুব মিয়া বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দারবান ও রাজশাহী, দিনাজপুর থেকে আম, কাঁঠাল ও লিচু আসছে। যখন বাজারে এসব ফল নতুন আসছে তখন একটু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। তবে আম ও কাঁঠালের পুরো সিজন হওয়ায় এখন দাম কমেছে। সরেজমিনে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে দেশি ফলের দাম কমতে শুরু করেছে। উত্তর চট্টগ্রামের হাট-বাজারগুরোতে দেশি ফলের মধ্যে এখন বেশি মিলছে আম ও লিচু। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে বিক্রেতারা ভ্যানে সাজিয়ে রেখেছেন আম ও লিচু। এছাড়া দেশি ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, কচি তাল, কলা, লিচু, আনারস, করমচা, ঢেউয়া, জামরুল, সফেদা, লটকন, বেল, গাবসহ অন্য ফলও কমবেশি পাওয়া যাচ্ছে। হাটহাাজরী পৌরসভা বাজারের ফল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, এখন জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ। তবুও আম-লিচু বেশি পাওয়া যাচ্ছে, দামও কম। ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, হিমসাগর ৮০-১০০ এবং আ¤্রপলি ৭০-৮০ টাকা। দেশি জাতের একশ লিচু ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, চাইনিজ লিচু ১৫০ টাকা। আম-লিচুর দাম কমেছে দাবি করে এ ফল ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহে যে লিচু তিনশ টাকা ছিল আজ তা বিক্রি করছি ২০০ টাকা। সব ধরনের আমের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে বলে জানান তিনি। এছাড়া চৌধুরী হাট এলাকায় ভ্যানে কাঁঠাল ও আম বিক্রি করছিলেন কামাল উদ্দিন। দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় কাঁঠাল ২৫০ টাকা, মাঝারি আকারের ১২০ থেকে ২০০ এবং ছোট ৮০ থেকে ১২০ টাকা। বড় কাঁঠালের ওজন ৫ থেকে ৬ কেজি। মাঝারি আকারের ওজন চার কেজির মত। এদিকে বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে মানভেদে ল্যাংড়া আম বিক্রি করছি প্রতি কেজি ৭০-৯০ টাকা, হিমসাগর ৭০-১০০, আ¤্রপালি ৬০-৮০, খিরসাপাতি ৫০ থেকে ৭০, গুটি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। জাম প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, জামরুল ৫০ থেকে ৮০, সফেদা (কেজি) ১০০ থেকে ১৪০, লটকন ৮০ টাকা কেজি। একশ লিচু (বড়) ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, আনারস আকারভেদে প্রতি পিস ১৫ থেকে ৬০ টাকা, কলা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ডজন, বেল প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচা তাল ২০ থেকে ২৫ টাকা (প্রতি শাঁস ৫ টাকা)। মেখল ইউনিয়নের ইছাপুর এলাকা থেকে হাটহাজারী বাজার এসে তার ছেলেমেয়েদের জন্য লিচু কিনছিলেন সাদিয়া আক্তার। তিনি বলেন, রোজায় দাম বেশি ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। একশ লিচু কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। তবে আমের দাম এখনও তেমন কমেনি দাবি করে এ ক্রেতা বলেন, ল্যাংড়া আমের দাম চাচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। এখন আমের মৌসুম, দাম এতো বেশি হবে কেন। ইচ্ছে মত দাম রাখে। তবে দোকানের চেয়ে ভ্যানে ফলের দাম কম। ভ্যানে যে আম ৬০-৭০ টাকা একই আম দোকানে ৯০-১০০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি বলে অভিযোগ করেন এ ক্রেতা।