মণি-মুক্তার প্রতি ভালোবাসা

56

খো কা ও রহমান দুই বন্ধু। খোকার ইচ্ছা সে রাজা হবে! সে কিন্তু রাজকুমার। তার বাবার মৃত্যুর পর সে রাজা হয়। হঠাৎ পাশের এক রাজা তার রাজ্য আক্রমণ করে এবং দখল করে নেই। এখন সে রাজ্য হারা। কিন্তু সে তার ইচ্ছার কথা ভুলে নি। খোকা এবং রহমান বেরিয়ে গেলো রাজা হবার ইচ্ছা নিয়ে। কে করবে তাকে রাজা! হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি এলো সে একটি ছোট দেশ আক্রমণ করবে! দেশ আক্রমণ করার জন্য চাই হাজার হাজার সৈন্য ও অস্ত্র শস্ত্র। তা পাবে কোথায়? তখন তারা দু’জন ঘোড়া ব্যবসায়ী সেজে একটি গ্রামে আশ্রয় নিল। এই গ্রামে থাকতে থাকতে তাদের অনেক যুবকের সাথে পরিচয় হয়। এভাবে বহু দিন কেটে যায়। খোকা একদিন সে গ্রামের সকল যুবকদের নিমন্ত্রন করেন। সবাই এলো। তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে নানা প্রকার সুস্বাদু খাদ্য। সব তাদের সামনে পরিবেশন করা হয়। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। তখন খোকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে তার ইচ্ছার কথা বলল। তাদের অনেকে তার কথায় রাজি হয়। সবাই সে দিনের মত যার যার বাড়িতে চলে যায়। খোকা সবাইকে বলে দিয়েছিল কখন তারা গ্রাম থেকে প্রত্যাবর্তন করবে। সবাইকে এটিও বলে দেয়া হয়েছে তারা যেন তাদের পরিবারের সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসে। দেখতে দেখতে গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সময় এসে গেল। খোকা সবাইকে বলল কাল গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশের পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে শিবির গড়তে। কারণ সবাই এক সাথে গেলে কেউ সন্দেহ করতে পারে। সবার আসা শেষ হলো!
এখন যুদ্ধ পরিকল্পনা করা হলো কি ভাবে তাঁরা যুদ্ধ করবে! রহমান বলল তাদের মধ্য থেকে দশ বা পনেরো জন সৈন্য ঘোড়া ব্যবসায়ীবেসে রাজধানীতে প্রবেশ করবে এবং রাজদরবারের ফটকে থাকা রক্ষীদের হত্যা করবে। তাদের প্রচ্ছদে অন্যরা যাবে এবং আক্রমণ করবে। তাঁরা বেরিয়ে পড়লো। কথা মত এক দল আগে এবং অন্যরা পশ্চাদে আক্রমণ করল। তখন সে দেশের রাজা মধ্যভোজে ব্যস্ত ছিল। তাই সে যুদ্ধ না করে রাজদরবারের পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। খোকা ও তাঁর সৈন্যরা সহজে সে দেশ জয় করে নেয়।
এখন খোকার রাজা হওয়ার স্বপ্ন পূর্ণ হলো! এখন সে রাজা। তার বন্ধুকে করল তার প্রধানমন্ত্রী। আর অন্য সেনাদেরও দেওয়া হয় রাজ্যের বড় বড় পদ। এখন তাদের ইচ্ছা রাজ্যে সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এবং তাদের দেশের সীমানা বৃদ্ধি করা। দেশ জয়ের তিন বছর পর আরো একটি দেশ জয় করে। নতুন দেশ জয় করার কিছুদিন পর খোকা বন্দু দেশের এক রাজকুমারীকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছু বছর পর তাদের দাম্পত্য জীবনে এলো এক নতুন অতিথি। খোকার জীবনে এলো আরেক খোকা। সুখে শান্তিতে চলছে রাজ্যব্যবস্থা। রাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে পুরারাজ্যে।
এই দিকে রাজকুমার যুবক হয়ে উঠছে। অন্যদিকে খোকার বয়সে এসেছে বার্ধক্য। রাজকুমার চায় তার বাবা রাজ্যের ভার ছেড়ে দিয়ে অবসর সময় কাটাক। রাজকুমারের কিছু আচরণ থেকে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তা রাজা দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। রাজা সাত-পাঁচ ভাবতে থাকে। এক সময় খোকার দেশে এক বন্ধু রাজা বেড়াতে আসে এবং তার জন্য অনেক মণি মুক্তা উপহারও আনে। উপহার স্বরূপ যে সব মণি-মুক্তা পায় তা রাখার জন্য রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর কক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে অন্য আরেকটি কক্ষ নির্মাণ করে এবং লোহার কপাট লাগানো হয়। সে কক্ষের দিকে রাজা ও প্রধানমন্ত্রী ব্যতিত কেউ বিনা অনুমতিতে আসতে পারেনা। বন্ধু রাজার দেয়া উপহারটি সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে বলল তা ঐ কক্ষে রাখার জন্য। মন্ত্রীও তা করল। কিচ্ছুক্ষণ পর রাজার ইচ্ছা হলো, মণি মুক্তার সৌন্দর্য দেখে তার মনকে প্রশান্ত করবে। তা ভেবে রাজা ঐ কক্ষে প্রবেশ করল এবং কক্ষের প্রধান দরজাটি খোলা রাখলেন। কোনো এক কাজে মন্ত্রী ঐ কক্ষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, দেখতে পেলো মণি-মুক্তার কক্ষে দরজা খোলা। তিনি কিছু না ভেবে দরজা বন্ধ করে দিল। কারণ রাজা দেখলে চাকরি তো যাবেই সাথে গর্দানও। কিন্তু ঐ কক্ষে ছিল রাজা। তা প্রধানমন্ত্রী জানতেন না। এক দিন হয়ে গেলো! রাজাকে রাজ দরবারের কোথাও দেখা যাচ্ছে না। সবাই সবখানে তালাশ করল। কোথাও রাজার খোঁজ মিলল না। এ ভাবে এক সপ্তাহ চলে যায়। সভাসদের সবার পরামর্শক্রমে রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজকুমারকে করা হলো কার্যনির্বাহী রাজা। রাজ্যের মানুষ যেন রাজকুমারকে সন্দেহ না করে সে জন্য সারা রাজ্যে তালাশ করার আদেশ দেয়া হয়। রাজ্যের কোথাও পাওয়া গেলো না রাজাকে।

রাজকুমার কার্যনির্বাহী রাজা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের সকল দলিল ও কোষাগারের চাবি এনে দেওয়া হয়। সেখানে ছিল ঐ মণিমুক্তার কক্ষের চাবিও! রাজসভা শেষে রাজকুমার মণি মুক্তার কক্ষটি পরিদর্শন করতে ইচ্ছা করে। প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়ে যায় কক্ষে। দরজা খুলে দেখতে পায় তাদের রাজা মৃত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। তিনি সে কক্ষের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লিখে রাখেন তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। মণি মুক্তার প্রতি ভালোবাসায় তার মৃত্যুর কারণ।