মঙ্গোলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

42

বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নেমেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেমি ফাইনালে মঙ্গোলিয়াকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে চোটের কারণে ছিলেন না টাইগ্রেসদের দুই সেরা খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না এবং কৃষ্ণা রানী সরকার। মনিকা চাকমার একমাত্র গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। বিরতির পর মারজিয়া আর তহুরার গোলে ফাইনাল নিশ্চিত করে লাল-সবুজের দলটি।
প্রথম সেমি ফাইনালে কিরগিজস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী গোল্ডকাপের ফাইনালে উঠেছে লাওস। কিরগিজদের ৭-১ ব্যবধানে হারিয়েছে লাওস। পের হ্যাটট্রিকে ৭-১ গোলে জিতেছে লাওস। টুর্নামেন্টে টানা তিন জয় পায় দলটি। এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে মঙ্গোলিয়াকে ৫-০ ও তাজিকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল লাওস।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য দেখাতে থাকে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। ম্যাচের নবম মিনিটে মারজিয়ার দারুণ গতির কাছে হার মেনেছিল মঙ্গোলিয়ার ডিফেন্ডাররা। তবে, অফসাইডের কারণে মারিয়া স্কোর করতে পারেননি। ১৫ মিনিটের মাথায় মারিয়া মান্ডার বাড়ানো বলে শট নিয়েছিলেন মারজিয়া। সেবারও ব্যর্থ হন তিনি। দুই মিনিট পর সহজ সুযোগ পান সানজিদা। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের ভুল পাস ধরে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিয়েছিলেন এস সেভেন খ্যাতি পাওয়া এই খুদে টাইগ্রেস। গোলরক্ষক ঝাপিয়ে তার শটটি রুখে দেন।
২০ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে হেড করতে পারেননি মারিয়া, সানজিদারা। বল পেয়েছিলেন ডি বক্সে অফমার্কে থাকা ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। বেশ সময় নিয়ে জোরালো শট নেন তিনি। তবে, বলের গতির সামনে এসে বাধা হয়ে দাঁড়ান মঙ্গোলিয়ান সলোঙ্গো চিনবাতার। তার গায়ে লাগলে নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বেঁচে যায় মঙ্গোলিয়া। ফিরতি কর্নার থেকে বলে শট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের দলপতি মৌসুমী। গোলবারের উপর দিয়ে বল বেরিয়ে যায়।
২৪তম মিনিটে গোলবারের বামদিক দিয়ে আক্রমণ সাজান মারজিয়া। তার বাঁকানো শট রুখে দেন মঙ্গোলিয়ার গোলরক্ষক তেজাভ এরদেনেবিলেগ। ২৭ মিনিটে আঁখির লম্বা পাস ধরতে পারেননি সাজেদা। ৩৩ মিনিটে শামসুন্নাহারের দুর্বল শট জমা পড়ে মঙ্গোলিয়ার গোলরক্ষকের গøাভসে। ৩৭ মিনিটে মারজিয়ার শট ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরলে ফিরতি শট নেন সাজেদা। এবারও প্রতিপক্ষের শক্ত ডিফেন্সে বাধা পায় বল।
প্রথমার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে বাংলাদেশ লিড নেয়। টুর্নামেন্টের সেরা গোল হওয়ার যোগ্য এটি। মনিকা চাকমার একক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। ডানদিক থেকে আসা বলের গতি ধরে রেখে প্রথমে হেড করে বল নিজের আয়ত্বে নেন মনিকা। এরপর তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে শট নেন, তাতে মঙ্গোলিয়ার গোলরক্ষকও কিছুটা ভ্রান্ত হলে বল গিয়ে জালে আশ্রয় নেয়।
১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতির পর মাঠে নামে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫২তম মিনিটে সানজিদার তুলে মারা বলে হেড করতে পারেননি প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ফাঁকায় থাকা বদলি নামা তহুরা। ৫৮ মিনিটের মাথায় আবারো স্কোর করতে ব্যর্থ হন তিনি। ৬৯ মিনিটে বাংলাদেশ তাদের লিড দ্বিগুণ করে। এবার গোল করেন মারজিয়া। দেশের এই মিডফিল্ডার বামপায়ের দারুণ এক শটে বল জালে জড়ান। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-০ গোলের ব্যবধানে।
৮০ মিনিটের মাথায় নিজেদের অর্ধ থেকে বল বাড়িয়ে দেন আঁখি। মৌসুমী-সাজেদার ভুল বোঝাবুঝিতে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে শট নিতে পারেননি তারা। পরের মিনিটে মনিকার দূরপাল্লার শট গোলবারের পাশ দিয়ে জালে জড়ায়। ৮২ মিনিটে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আসার সুযোগ পায় মঙ্গোলিয়া। তবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে সেই সুযোগ নষ্ট করে তারা। ৮৫ মিনিটের মাথায় বাংলাদেশ তৃতীয় গোলটি করে। মঙ্গোলিয়ার ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে জোরালো শট নেন তহুরা। গোলরক্ষক ঝাপিয়ে পড়লেও বলের নাগাল পাননি। ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে এই স্কোরেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
গ্রæপ পর্বে টানা দুই ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ। অপরদিকে লাওসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারলেও; তাজিকিস্তানকে হারিয়ে শেষ চারের টিকিট পায় মঙ্গোলিয়া। বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে আরব আমিরাত আর কিরগিজস্তানকে হারায়। ফাইনালের মঞ্চে টাইগ্রেসদের প্রতিপক্ষ লাওস।