ভোটের মাঠে উত্তাপ বাড়ছে

79

মাঝখানে একদিন পরেই আগামি সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচন। আজ মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে প্রার্থীদের প্রচারণা। নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে মাঠে নামছে দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকলেও ভোটের মাঠের উত্তাপ বাড়ার শঙ্কায় আছে প্রার্থীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর প্রচারণাকালে পাল্টাপাল্টি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় এ শঙ্কা বাড়তে শুরু করেছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের মধ্যে উৎকন্ঠা বাড়ছে ততই।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘ভোটের মাঠের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক আছে। বড় ধরণের কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। ভোটের আগে ও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে। আগামিকাল রবিবার থেকে সকল কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে যাবে’।
জানা যায়, চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনী অপরাধ আমলে নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাঁচ ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বোয়ালখালী অংশে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারকে নিয়োগ দিয়েছে ইসি। এই দুই কর্মকর্তা আজ থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে ভোটের বাকি আর দুইদিন থাকলেও ভোটারদের মধ্যে ভীতি ও শঙ্কা রয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত নগরী অংশে বড় ধরণের কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটলেও বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকদফা হামলা পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার জন্য দুই পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। এতে ভোটের সময় ঘনিয়ে আসলেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। ভোটের দিন পর্যন্ত এমন উত্তাপ অব্যাহত থাকলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে ভোটাররা।
সূত্র জানায়, প্রচারণা শুর হওয়ার পর গত ৩০ ডিসেম্বর বোয়ালখালীতে প্রচারণা চালাতে গেলে বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় তার কর্মীদের মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনেন তিনি। একইভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেও সুফিয়ানের গাড়িতে হামলা ও বোয়ালখালীর পৌরমেয়রের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়। বছরের প্রথমদিন চান্দগাঁও আবাসিকে পোস্টার লাগাতে গিয়ে হামলার শিকার হন যুবদল নেতা মোশাররফ। ২ জানুয়ারি চান্দগাঁও খাজা রোডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন ইলিয়াস ও জাবেদের অনুসারীরা। এসময় জাবেদসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। গত ৩ ডিসেম্বর কালুরঘাট এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে বোয়ালখালীর পূর্ব কালুরঘাট এলাকায় গণসংযোগ করতে যান বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। একই এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ক্যাম্প উদ্বোধন করতে সেখানে কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার এক পর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদন্ডী আমতল এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ককটেল বিস্ফোরন ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা স্লোগান দিয়ে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে বারবার এমন ঘটনা নির্বাচনের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিজেদের অবস্থান ইতোমধ্যে তুলে ধরেছে প্রশাসন। ইসির পক্ষ থেকেও প্রার্থীদের মতামত গ্রহণ করে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখার কথা বলা হয়েছে। এ আসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ আরো দুইজন নির্বাচন কমিশনার বারবার সফরে আসায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন ভোটাররা।