ভোটার হচ্ছেন প্রবাসীরা

95

বিশ্বের ১৬০ দেশে বসবাসরত প্রায় এক কোটি প্রবাসী ভোটার হচ্ছেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগির প্রবাসীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। ১০টি দেশে স্থাপন করা হচ্ছে অফিস।
জানা যায়, বিশ্বের ১৬০টি দেশে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি বসবাস করছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ নানা কর্মকান্ডে লিপ্ত তারা। এদের মধ্যে ৫০ লাখ প্রবাসীর দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলেও এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক। এই এক কোটি নাগরিক ভোটাধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিদেশে কর্মরত বা বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দিয়েছেন। গত ১ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তাগিদ দেন তিনি।
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি লোক প্রবাসে অবস্থান করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু এদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা যাতে এনআইডি পেতে পারেন, তার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এটা সম্ভব হলে প্রবাসীদের নাগরিকত্বসহ তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পেতে সহজ হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যাতে এনআইডিসহ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান, সে বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শিগ্গির বিভিন্ন দেশে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করবে কমিশন। অফিস স্থাপন করা হবে ১০টি দেশে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা দিল্লীতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলেছেন, প্রবাসীদের জন্য ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন দেশে এই নিবন্ধন কার্যক্রম চালানো হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর জন্য সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে অফিস স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, এ জন্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করার জন্য টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশে সফর করবেন।
সূত্র জানায়, বিপুলসংখ্যক প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে নির্বাচন বিধিমালায় সংশোধনী আনে নির্বাচন কমিশন। সংসদে আইন পাস হয়। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বরে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আইনে সম্মতি দিয়ে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান।
ওই আইনে বলা আছে, ‘কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে তিনি দেশে সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকা বা ভোটার এলাকায় বসবাস করেছেন অথবা তার নিজের বা পৈত্রিক বসতবাড়ি যেখানে ছিল বা রয়েছে; তিনি সেই এলাকার অধিবাসী বলে গণ্য হবেন।’
সে সময় ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এখন থেকে সকল নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন প্রবাসীরা।
প্রবাসীরাও আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর ৯ বছর কেটে গেলেও আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বের ১২০ দেশে তদের প্রবাসী নাগরিকদের বিভিন্নভাবে ভোটাধিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে আছে এশিয়ার ২০টি দেশও।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই ভোট দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরা যদি ভোট না দেন, সেক্ষেত্রে তাদের জরিমানা করার ব্যবস্থা আছে। জাপানি নাগরিকরাও ভোট দিতে পারেন। কানাডার নাগরিকদের ভোটাধিকার রয়েছে। ফিলিপাইনও তার প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। হংকং, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরেও আছে অপটিক্যাল স্ক্যানিং ভোটিং সিস্টেম।
প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভোটার করার দাবি জানিয়ে আসছে। অতীতে আন্দোলনও করেছে। হাই কমিশন ও রাষ্ট্রদূতদের মাধ্যমে স্মারকলিপিও দিয়েছে। সব সরকার বার বার আশ্বাস দিয়েও কার্যকর করেনি।
আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক নাছির তালুকদার বলেন, প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও তাদের সে মর্যাদা দেয়া হয় না। ভোটাধিকার প্রয়োগ সকলের নাগরিক অধিকার। সে অধিকার থেকে প্রবাসীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা তার বাস্তবায়ন চাই। যাতে পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারি।
প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সংগঠন ডব্লিউবিসির তথ্য মতে, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জাতীয় প্রবৃদ্ধির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অবদান রেখে চলেছে। নাগরিক হিসেবে এই প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখলেও তাদের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক অধিকার ‘ভোটাধিকার’ প্রয়োগ করতে পারছেন না বছরে পর বছর।
সংগঠনটি মনে করে, বিশ্বজুড়ে বসবাসরত লাখ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোটদানের সুযোগ ছাড়া বাংলাদেশে যে কোনো জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও কোনক্রমেই অবাধ ও প্রহণযোগ্য হতে পারে না। রেমিট্যান্সের উৎস তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার তথা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা অসাংবিধানিক।