ভোক্তার স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় আইন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে

56

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে গত শনিবার দেশের সর্বত্র ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হয়েছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এবারের দিবসটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে উৎসর্গ করা হয়েছে, যার প্রতিপাদ্য ছিল- ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, সুরক্ষিত ভোক্তা অধিকার।’
দিনটি ঘিরে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে অধিদফতর। এছাড়া ভোক্তার অভিযোগ জানানো সহজ করার লক্ষ্যে ভোক্তা হটলাইন নম্বর (১৬১২১) উদ্বোধন করেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আগের মেয়াদে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ন করেছে, যা দেশের ভোক্তা সাধারণের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিদ্যমান কাঠামোতে দেখা যায়, ২৪০ জন জনবলের মধ্যে বাজার তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মহাপরিচালক ও দু’জন পরিচালক আছেন। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য প্রধান কার্যালয়সহ বিভাগীয় কার্যালয়ে মোট ১১ জন উপপরিচালক আছেন।
সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ৮৬ জন। পরীক্ষক আছেন ৩ জন। অভিযোগ গ্রহণকারী রয়েছেন ৩ জন। নমুনা সংগ্রাহক ২ জন। সব মিলে দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ে সরাসরি কাজ করছেন মাত্র ১০৮ জন।
কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ২৪০ জন পূর্ণ করতে পারে নি। দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে প্রতিষ্ঠানটির জনবল মাত্র ২০৮ জন। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে ১০৮ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল না থাকায় প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কোনো অভিযান পরিচালনার পর ফলোআপ করা সম্ভব হয় না। এতে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে ভোক্তা অধিকার। যার সুবিধা নিচ্ছে মুনাফাভোগী একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সূত্রে জানা যায়, ভোক্তা অধিকার রক্ষার জন্য প্রণীত আইন প্রয়োগ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক যে সক্ষমতা, তা বৃদ্ধি করা হয়নি। ফলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও জরিমানা করা হচ্ছে, যা পর্যাপ্ত না। আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জনবল বাড়িয়ে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের প্রতারিত করেই যাবে।
তবে আশার কথা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জনবল বাড়ানোর সুপারিশের ভিত্তিতে জনবল বাড়ানোর কাজ চলছে।
আমরা মনে করি, সরকার যে মহৎ উদ্দেশ্যে ভোক্ত অধিকার কমিশন ও আইন করেছে, যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে নকল, ভেজাল, প্রতারণা ও মজুদদারী প্রতিরোধ সম্ভব হবে। বর্তমানে এসব অপরাধের যে অবস্থা তাতে নকল ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে তদারকি করতে হবে। শহরে নিবিড় মনিটরিংয়ের কারণে ভেজালের আগ্রাসন অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামগঞ্জে নিয়ে গেছে। এজন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অফিস প্রয়োজন, যাতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা যায়।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ভেজাল ও ক্ষতিকর পণ্যে সয়লাব দেশের বাজার। স্বল্প সময়ে অর্থশালী হওয়ার লক্ষ্যে নকল ও ভেজাল পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করে চলেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভেজাল পণ্য রোধে সরকার তৎপর থাকলেও প্রতারণার হাত থেকে মুক্তি মিলছে না ভোক্তাদের। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অনেক ভোক্তাই আইন সম্পর্কে অবগত নন। তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভোক্তাদের আইন সম্পর্কে জানাতে হবে এবং নির্ধারিত পন্থায় অভিযোগ দায়েরে উৎসাহিত করতে হবে। ভোক্তারা সচেতন হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমবে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে ও দীর্ঘমেয়াদে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা জরুরি।