ভেজালের সাথে কোন আপস নয়

39

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, রমজান আসলে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম ও ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় বলে অনেকে মন্তব্য করেন। গত রমজান মাস শুরুর আগে থেকে যেভাবে ভেজাল বিরোধী অভিযান ছিল, ঠিক সেভাবে ১২ মাস অভিযান অব্যাহত থাকবে। মধু মাসে বাজারে ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যালযুক্ত ফল বিক্রি করলে রেহাই নেই। যেখানে ভেজাল, সেখানে আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে ও মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হবে। এজন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভেজালের সাথে কোন ধরনের আপস নয়।
তিনি বলেন, বিচারক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে মামলার জট হচ্ছে। মামলার বাদী-বিবাদী অনেকে তাদের মামলার অগ্রগতি বিষয়েও অবগত নন। মামলা মাথায় নিয়ে মানুষকে যাতে কবরে যেতে না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আদালতের বিচারক, পিপি ও সংশ্লিষ্টদেরকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে। কাউকে হয়রানি বা বিনা দোষে দোষী সাব্যস্ত না করে আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্তু নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃংখলা কমিটির সভা, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ সমন্বয়ে গঠিত বিভাগীয় কমিটির সভা, এসডিজি বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সম্পর্কিত বিভাগীয় কমিটির সভা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সংক্রান্ত সভা, জেলা প্রশাসকগণের সাথে সমন্বয় সভা এবং বিভাগীয় রাজস্ব সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাদক একটি ভয়াবহ ব্যাধি। পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে সড়ক ও নৌপথ দিয়ে মাদক পাচার করছে। মাদকের কারণে আমাদের যুবসমাজ ধবংস হয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। তাদেরকে মাদকের ছোবল থেকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে দেশ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। তাই মাদকের বিরুদ্ধে বেশি নজরদারী বাড়াতে হবে। সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ, অস্ত্রের বিরুদ্ধে যেমন জিরো টলারেন্স, ঠিক এখানে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশেও জিরো টলারেন্স থাকবে। এছাড়া কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তেল পাচাররোধে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল আরও জোরদার করতে হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অমান্য করা যাবে না। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখাসহ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদ ও চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কর্তৃক বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য বিবরণী, নিষ্পত্তি ও অগ্রগতির প্রতিবেদন নিয়মিত দাখিল করতে হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস পৃথক সভাগুলোর আয়োজন করে। গত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ এনামুল হাসান ও মো. মোজাম্মেল হক।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, নগরীর আইন-শৃংখলা স্বাভাবিক রয়েছে। মাদকরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে থাকবে জিরো টলারেন্স। অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালানরোধ, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাগুলোতে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, বিজিবি’র চট্টগ্রাম রিজিয়নের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আমিরুল ইসলাম সিকদার, ডিজিএফআই’র চট্টগ্রাম শাখার কর্মকর্তা বি. জেনারেল মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ ভূইয়া, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা, কাস্টমস কমিশনার এম. ফখরুল আলম, ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মো. মাহাবুবুজ্জামান, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক কর্নেল মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম, বিজিবি বান্দরবানের সেক্টর কমান্ডার মো. জহিরুল হক, কোস্টগার্ড পূর্বজোনের অধিনায়ক কমান্ডার রেদওয়ান, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার সার্জেন্ট লে. আমিনুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), তন্ময় দাস (নোয়াখালী), মো. মাজেদুর রহমান খান (চাঁদপুর), আবুল ফজল মীর (কুমিল্লা), মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম (বান্দরবান), অঞ্জন চন্দ্র পাল (ল²ীপুর), মো. কামাল হোসেন (কক্সবাজার), মো. শহিদুল ইসলাম (খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা), মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ফেনী), এনএসআই’র অতিরিক্ত পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর চট্টগ্রাম রেঞ্জের পরিচালক মো. সাইফুজ্জামান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন, রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার নওরোজ হাসান তালুকদার, চট্টগ্রাম জেলা পিপি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী, মহানগর পিপি এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ জামাল আহমদ, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি আবদুল মান্নান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অঞ্জনা ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। এছাড়া পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।