ভূউপরিস্থ পানির দিকে নজর দিতে হবে

58

জাপান, সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করা হয় না। সেখানে সাগর-নদী তথা ভ‚-উপরিস্থ পানি শোধন করে ব্যবহার করা হয়। এটি পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। ওয়াসাকেও এ দিকটাতে নজর দিতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম ওয়াসার সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমন মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম ওয়াসায় এটাই ছিলো কোন মন্ত্রীর সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বোর্ড সদস্যদের প্রথম মতবিনিময় সভা।
সভায় ওয়াসার বিল অবস্থাপনা ও বিড়ম্বনা কমাতে ওয়াসার সকল কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। একই সাথে ওয়াসার আয় বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, দেশের চারটি ওয়াসার একটিও লাভজনক নয়। ঋণ, ভর্তুকি নির্ভরশীল হয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। তাই আয় বাড়ানো দরকার। এজন্য পানির দাম বাড়ানো যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে।
সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, চাহিদা পূরণে পানির উৎপাদন ৩৬ কোটি লিটার থেকে বাড়িয়ে ৪২ কোটি লিটারে উন্নীত করতে হবে। এজন্য নতুন প্রকল্প নেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হবে। এছাড়া অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার চালু জরুরি। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার চেয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম কম। ফলে সিস্টেম লস বাড়ছে। কিন্তু পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হলে বোর্ড সদস্যরা বিরোধিতা করছেন বলে আমরা জেনেছি। তবে প্রস্তাবটি বিবেচনা করা উচিৎ।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপ লাইন সংস্কার কাজের জন্য নগরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এজন্য জনভোগান্তি হচ্ছে। এটাকে আমি উন্নয়নের প্রসব বেদনা বলি। তবে কাজ শেষে জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। পাইপ লাইন সংস্কার কাজের জন্য রাস্তা কাটতে হচ্ছে। তবে অনেক সময় সিটি কর্পোরেশন রাস্তা সংস্কারের পর ওয়াসার লোকজন নতুন রাস্তাটি কেটে ফেলছে। সমন্বয়ের অভাবে এটি হচ্ছে। কিন্তু সমন্বয় থাকা জরুরি।
সভায় গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার উন্নয়ন মূলক কর্মকাÐ পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ।
সভা শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রীর উদ্দেশে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাবস্থায় দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হওয়া, অবসরে যাওয়ার পর কো-অপারেটিভ ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেলে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও কীভাবে এক ব্যক্তি দশবছর ধরে এমডির দায়িত্বে আছেন? জবাবে মন্ত্রী বলেন, নিশ্চয় সক্ষমতা ও যোগ্যতা আছে বলে বোর্ড তাকে এমডি হিসেবে রেখেছেন। এ বিষয়ে আমার বেশি কিছু বলার নেই।
ওয়াসার ৯০ শতাংশ পানি সরবরাহ করছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি গ্রাহক নিয়মিত পানি পায় না। তার প্রকৃত উদাহরণ নগরীতে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার হোল্ডিং থাকলেও ওয়াসার গ্রাহক আছে মাত্র ৭০ হাজার। এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ৯০ শতাংশ মানুষ পানি পাচ্ছে না, সেটা আমরা বলবো না। মানুষ পানি পাচ্ছে। হয়তো তাদের কারিগরি ত্রæটি রয়েছে। সেজন্য হিসাবে এমন গড়মিল। ইতোমধ্যে অটোমেশন চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, কারিগরি সমস্যা সমাধান হলে হিসাব মিলে যাবে।
গ্রাহক প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হয়েছে চারবছর আগে। এখনও বোর্ড সভায় তিনি নিয়মিত প্রতিনিধিত্ব করছেন। বোর্ডসভায়ও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, গ্রাহক প্রতিনিধি নিয়োগের দায়িত্ব বোর্ডের। তারা বিষয়টি দেখবেন। তবুও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বোর্ডকে বলবো।
সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এসএম নজরুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম হোসেন প্রমুখ।