‘ভুয়া ভোটে’ জিতে ক্ষমতাসীনরা বেপরোয়া : রিজভী

31

ভোটের পর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ‘পৈশাচিক উল্লাসে বেপরোয়া’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সুবর্ণচরের পর নোয়াখালীর কবিরহাটে এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের উদাহরণ দিয়ে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে সুবর্ণচরের নির্যাতিতা পারুল বেগমের আহজারি ও গোঙানি থামতে না থামতেই নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে মা ও ছেলে-মেয়েদের জিম্মি করে তিন সন্তানের মাকে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা গণধর্ষণ করেছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পর রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে সুবর্ণচরে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আওয়ামী লীগের এক নেতার ‘সাঙ্গোপাঙ্গোদের’ বিরুদ্ধে। ওই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই শুক্রবার রাতে কবিরহাটে ঘরের সিঁধ কেটে ঢুকে আরেক গৃহবধূকে ধর্ষণের খবর আসে। এরই মধ্যে ওই ঘটনার প্রধান অঅসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কবিরহাটের নির্যাতিত গৃহবধূর রাজমিস্ত্রি স্বামী ভোটের আগে মারামারির এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তবে ওই গৃহবধূর স্বামীকে স্থানীয় যুবদলের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ধর্ষিতার স্বামী ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, যিনি মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি। এই গণধর্ষণ শুধু হৃদয়বিদারকই নয়, মনুষ্যত্বহীনতার এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, ভুয়া ভোটের মিথ্যা জয়ে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। কুৎসিত অপকর্ম করতে তারা এখন বেপরোয়া। আমি নোয়াখালীর কবিরহাটে ধর্ষণের ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
কবিরহাটে নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াতে দলের নেতাকর্মীদের আহব্বান জানান রিজভী। খবর বিডিনিউজের
লক্ষীপুরের বসিকপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুননবীকে গুলি করে আহত করার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন তিনি।
শনিবার সোহরাওয়ার্ধী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে ‘গণতন্ত্র হত্যার উৎসব’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। গতকালকে (শনিবার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনগণের পকেট কাটার টাকায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি ছিল রাষ্ট্রের মালিক জনণের আরেকটি অবজ্ঞাভরা মশকরা। এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল (শনিবার) গণতন্ত্র হত্যার উৎসবে পরিণত করা হল।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি বলেছেন জনগণ নাকী এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। তার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে, ভেবে পাচ্ছে না। যখন মহাভোট ডাকাতিতে ভোটাধিকার হারা জনগণ ব্যথিত, বিমর্ষ ও বাক্যহারা তখন তাদেরকে নিয়ে এই ধরনের বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
জনগণ মনে করে, ভুয়া ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ ভোটের আগেরদিন রাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ভোটের অধিকারটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাতভর ব্যালট বাক্সে নৌকা মার্কায় সিল দেওয়া ব্যালট পেপার ভরিয়ে দিয়েছে। ভোট জালিয়াতি করতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং গোপনে উৎকোচ দেওয়া হলেও প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।