‘ভুয়া পদে’ বিএনপির দুই কাউন্সিলর প্রার্থী

54

ঘোষণা করা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ‘ভুয়া পদ’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুই সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ‘ভুয়া পদ’ ব্যবহার করে মনোনয়ন বাগিয়ে এনেছেন। এদের মধ্যে একজন নগর মহিলা দলের সভানেত্রী এবং অন্যজন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পরিচয় দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় ১৪, ১৫ ও ২১ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসাবে মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি এবং ১৭, ১৮ ও ১৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী হিসাবে ১৭ নং ওয়ার্ড মহিলা দলের সভাপতি মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণাকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু মনোয়ারা বেগম মনি গত বছরের ৫ অক্টোবর নগর মহিলা দল থেকে বহিষ্কার হন।
চলতি মাসে মনির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও ফিরে পাননি পদবি। এরই মধ্যে দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী হতে নিজেকে মহিলা দলের সভানেত্রী পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এই পরিচয় ব্যবহার করায় দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণাকে দেখানো হয় ১৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভাপতি। বাস্তবে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি শামীমা নাসরিন। মাহমুদা ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর কোনো ওয়ার্ডের মহিলা দল বা বিএনপির কোনো পদে নেই। এভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মনোনয়ন ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ড মহিলা দলের নেত্রীরা।
মিথ্যা তথ্য প্রদান সম্পর্কে জানতে চাইলে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বিএনপির মনোয়ন পাওয়া মনোয়ারা বেগম মনি বলেন, এটা দলীয় ব্যাপার। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত কোনো মতামত নেই। আমি দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।
একই বিষয়ে কথা বলার জন্য অপর মনোনয়নপ্রাপ্ত মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মহানগর মহিলা দলের জয়েন্ট সেক্রেটারি। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর মেম্বার। আমাকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতির পদ দিতে চেয়েছিল, এক নেতার এক পদের দল হওয়াতে আমি সেটা নেইনি।
কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি এ প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, তুমি কার লোক? আমি কোন পদে আছি না আছি, তুমি কেন জানতে চাইবে? তুমি সাংবাদিক হলে আমার সাক্ষাৎকার নিবে। আমি কাউন্সিলর হলে কি করবো, না করবো সেটা জানতে চাইবে। আমার পদ নিয়ে তুমি কেন কথা বলবে? তুমি কার লোক? সাংবাদিক হলে তো আমার বিষয়ে তুমি জানতে চাইতে পারো না।
উল্লেখ্য, মনোয়ারা বেগম মনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বাগমনিরাম, জামালখান ও লালখান বাজার ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। গত বছরের ৪ অক্টোবর নগরীর লালখান বাজার এলাকায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত এক বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মনোয়ারা বেগম মনি চসিক মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি আহব্বান জানান।
ওই বক্তব্যের জেরে ৫ অক্টোবর মনোয়ারা বেগম মনিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী করা হয় দলের সিনিয়র সহ-সভানেত্রী ফাতেমা বাদশাহকে। এরপর দীর্ঘদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান মনি। দেশে ফিরে আবার তিনি সক্রিয় হন সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত কর্মকান্ডে।
গত ১৬ ফেব্রূয়ারি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে। তবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও মনি ফিরে পাননি দলীয় পদ। আর আগের পদ ব্যবহার করেই দলীয় মনোনয়ন নিলেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হলে নগর মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী বেগম ফাতেমা বাদশা বলেন, মনোয়ারা বেগম মনিকে সভানেত্রী দেখানো হয়েছে। আমরা হতভাগ হয়েছি। এটা কীভাবে হলো? আমরা এটার প্রতিবাদ জানাই। এই পদবি ব্যবহার করে দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে অপমান করা হয়েছে। মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণাকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি দেখানো হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। তাকে ওয়ার্ডের পদে কেন দেখানো হবে?
অন্যদিকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভানেত্রী হিসাবে দেখানো মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণা নগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক পদে আছেন। ওয়ার্ডের কোনো কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত না থেকে তিনি ভুল তথ্য দিয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন। মাহমুদার এমন কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা দলের নেতারা।
১৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভানেত্রী শামীমা নাসরিন বলেন, পত্রিকায় আমরা দেখেছি মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণাকে সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী করা হয়েছে। দলীয় পরিচয় হিসাবে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দেখানো হয়েছে। এই নামে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কেউ নেই। শুধু ১৭ নম্বর ওয়ার্ড নয়, ১৮ নং ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলেও এই নামে কেউ নেই। অন্য কোথাও থাকলে সেটা আমারা জানি না। তাকে (মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণা) ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি বলে মিথ্যাচার করা হয়েছে। আমি এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
ভুয়া পদ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবুল হাসেম বক্কর বলেন, মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণা মহিলা নেত্রী। সে মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক। সে ভুয়া পদ কেন ব্যবহার করবে? ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভানেত্রী লিখেছে, ভুল লিখেছে। মনোয়ারা বেগম মনি মহিলা দলের সভানেত্রী। তার পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি দলের সেক্রেটারি, আমি জানি।
মনোয়ারা বেগম মনির পদবি নগর মহিলা দলের সভানেত্রী দেখানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণার ব্যাপারে তিনি বলেন, মাহমুদা সুলতানা ঝর্ণাকে ভুলে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি দেখানো হয়েছে। ঝর্ণা নগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক। নাম, মোবাইল নম্বর ঠিক আছে; শুধু পদবি লিখায় ভুল হয়েছে।