ভুয়া তথ্যে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে যেতে চায় রোহিঙ্গারা

54

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্যাপক কড়াকড়ি। সরকারের ভাষ্যমতে, সকল রোহিঙ্গা ক্যাম্পই সিলগালা। ভোটার তালিকা হালনাগাদ চলমান থাকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারেন, তা নিয়েও সোচ্চার প্রশাসন। এতকিছুর পরও রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট বানিয়ে বৈধ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এ পাসপোর্ট করেই বৈধ নাগরিকত্ব নিয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।
গত এক মাসেই নগরীর মনসুরাবাদ ও পাঁচলাইশ অফিসে পাসপোর্ট করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন কমপক্ষে ২০ জন রোহিঙ্গা। ধরা পড়া রোহিঙ্গারা কাগজে কলমে ক্যাম্পে থাকার কথা থাকলেও তারা ভুয়া ঠিকানায় জাতীয়তা সনদ ও জন্মনিবন্ধন করিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিরা যাচাইবাছাই না করেই তাদের এসব কাগজ সরবরাহ করছেন। আর এসব অপকর্মে রোহিঙ্গাদের সাথে মোটা অঙ্কের চুক্তিতে সহযোগিতা করছেন সংঘবদ্ধ দালালচক্র। যারা পাসপোর্ট অফিসের কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে পাসপোর্ট বানাতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পিতা ও ভাই বিদেশে থাকায় নিজেও বিদেশে যেতে পাসপোর্ট বানাতে চান থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোস্তাকীমা। এ লক্ষ্যে ক্যাম্প ছেড়ে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটার আজিমপাড়ায় বাসাও ভাড়া নেন তিনি। সেখানের স্থায়ী বাসিন্দা ফরিদ আলমকে বাবা ও রোজি আক্তার নামে এক প্রতিবেশিকে মা সাজিয়ে সকলপ্রকার কাগজপত্রও তৈরি করেন। এরপর পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে ফাইল জমা দিতে গেলে ধরা পড়েন মোস্তাকীমা। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে।
রোহিঙ্গা নারী মোস্তাকীমার কথিত মা ও কর্ণফুলীর বাসিন্দা রোজী আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, মোস্তাকীমা টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকেন। সেখান থেকে এসে আমাদের এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় এবং আমাকে একটি পাসপোর্ট বানানোর কাগজ তৈরি করে দিতে বলে। আমি নিজে মা সেজে সবার কাছে গিয়ে কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করি। মোস্তাকীমা আমাকেসহ নিয়ে দেওয়ানহাট ব্রীজের নিচে পাসপোর্ট অফিসে যায়। সেখানে কামরুল নামে এক ব্যক্তিকে সাড়ে নয় হাজার টাকা দেয় সে। পাসপোর্ট হয়ে গেলে আরো কিছু টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু পাসপোর্ট করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় সে। এ ঘটনায় থানা পুলিশে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পরে কামরুল দুই হাজার টাকা ফেরত দিলেও বাকি টাকা দেয়নি।
এভাবে পাসপোর্ট করতে গিয়ে বাঁশখালীর মনকিচরের ঠিকানা ব্যবহার করা কুতুপালং ক্যাম্পের তাসলিমা আক্তার, চন্দনাইশ গাছবাড়িয়ার ঠিকানায় বালুখালি ক্যাম্পের হীরা আক্তার, দোহাজারীর ঠিকানায় বালুখালী ক্যাম্পের সুরা বেগম, সাতকানিয়ার আমিলাইশের ঠিকানায় থাইংখালী ক্যাম্পের শাহেনা আক্তার, হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ঠিকানায় মোহাম্মদ হারেস, লোহাগাড়া চুনতির ঠিকানায় কুতুপালং ক্যাম্পের মোহাম্মদ সাকের, চান্দগাঁও ঠিকানায় বালুখালি ক্যাম্পের আবদুল্লাহ, পটিয়ার কুসুমপুরার ঠিকানায় কুতুপালং ক্যাম্পের মোহাম্মদ আমিন, সীলপাড়ার ঠিকানায় মোহাম্মদ হেলাল, লোহাগাড়ার মাস্টারপাড়ার ঠিকানায় থাইংখালীর মোহাম্মদ আয়াস। এদের প্রত্যেকের বাবা-মায়ের নাম, ঠিকানা ভুয়া। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে ভুয়া ঠিকানায় জাতীয়তা সনদ, জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করেছেন প্রত্যেকেই। পাসপোর্ট করতে গিয়ে এসব প্রমাণিত হওয়ায় তাদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আল আমিন মৃধা পূর্বদেশকে বলেন, গত একমাসে পাসপোর্ট বানাতে এসে আমাদের হাতে ১৭ জন ধরা পড়ে। তারা প্রত্যেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিবন্ধিত হলেও ভুয়া ঠিকানার কাগজপত্র বানিয়ে পাসপোর্ট করতে আসে। তাদেরকে এ প্রক্রিয়ায় কেউ না কেউ সহযোগিতা করলেও আমরা প্রকৃত গ্রাহককে রোহিঙ্গা হিসেবে সনাক্ত করি। রোহিঙ্গাদের কাগজপত্র সরবরাহ করতে জনপ্রতিনিধিদের সজাগ থাকতে হবে। এমনো হতে পারে অনেকেই কাগজপত্র বৈধ থাকার কারণে সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে।
মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, রোহিঙ্গা কনফার্ম করাটা আমাদের জন্য কঠিন। আমরা কাগজপত্র পাওয়ার পর অনেক সময় ফাইল জমা নিই। এসময় যদি কাউকে সন্দেহ হয় তখন পুলিশের কাছে সোপর্দ করি। তখন হয়তো দেখা যায় পাঁচজনকে ধরা হলে সেখানে চারজন রোহিঙ্গা। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ছাড়া কোন পাসপোর্ট সরবরাহ করা হয়না। কেউ ভুয়া ঠিকানার কাগজপত্র বানিয়ে দিলেও পুলিশ রিপোর্ট কেমন আসছে তার উপর পাসপোর্ট পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করে। তবে আমার এ ব্যাপারে সজাগ থাকায় রোহিঙ্গা ধরা পড়ার সংখ্যা কমেছে।