ভুল বিচারে ১৯ বছর কারাভোগ ক্ষতিপূরণ ৪০ কোটি টাকা

18

পুলিশের এক কর্মকর্তাকে খুনের দায়ে ডেভিড ইস্টম্যানকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত। কারাগারে ১৯ বছর সাজা ভোগের পর জানা গেল, যে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এই অস্ট্রেলিয়ানকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটা ত্রুটিপূর্ণ। এরপর নতুন করে বিচারে ইস্টম্যানকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৪৮ লাখ ডলার (সাড়ে ৪০ কোটি টাকা প্রায়)।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইস্টম্যানকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ১৯৮৯ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের সহকারী কমিশনার কলিন উইনচেস্টারকে হত্যা করেন। কলিনের খুনের ঘটনা সে সময় অস্ট্রেলিয়ায় বিচারিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এ ঘটনার রহস্য উন্মোচনে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
কলিন উইনচেস্টারকে তাঁর বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা শহর থেকে মাথায় দু’টি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উইনচেস্টারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সম্ভবত এখন পর্যন্ত তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে খুনের শিকার সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা।
ইস্টম্যান সে সময় ছিলেন সরকারি কর্মচারী। পুলিশ তাঁকে উইনচেস্টার হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে। ইস্টম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অন্য একটি অপরাধের তদন্তের সময় তিনি পুলিশকে হুমকি দিয়েছিলেন।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড হওয়ার পরে ১৯ বছর ধরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন ইস্টম্যান। তিনি ১৯৯৯, ২০০০, ২০০১, ২০০৫ ও ২০০৮ সালে আপিল করেন। তবে প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হন।
এরপর ২০১৪ সালে এক বিচারিক তদন্তে বলা হয়, ইস্টম্যান ‘ন্যায়বিচার’ পাননি। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইস্টম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশ যে প্রমাণ উপস্থাপন করেছে, সেটা ত্রুটিপূর্ণ। এ প্রতিবেদনের পরে ইস্টম্যানের মামলার বিচার গত বছরে নতুন করে শুরু হয়।
ইস্টম্যানের দ্বিতীয় বিচারিক কার্যক্রমের সময় অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালত জানতে পারেন, নিজের মতো করে জীবনযাপনের অধিকার হারিয়েছেন ইস্টম্যান। একই সঙ্গে তিনি কোনো পরিবার গড়ার সুযোগ পাননি। অন্যদিকে কারাগারে অবরুদ্ধ থাকার দিনগুলোতে তাঁর মা ও দুই ছোট ভাইবোন মারা গেছেন।
বাদীর আইনজীবী স্যাম টিয়েনি বলেন, ‘ইস্টম্যান জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশই হারিয়ে ফেলেছেন’।
দ্বিতীয়বার বিচারের সময় অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালত ১০০ প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেন। এরপরই ইস্টম্যানকে বেকসুর খালাসের রায় দেন।