ভুলেও কমোড-বেসিনে যে ৮ জিনিস ফেলবেন না

99

অনেক কিছুই আমরা না বুঝে রান্নাঘর বা বাথরুমের বেসিনে ফেলে দেই। পরে যা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু জিনিস আছে যেগুলো বেসিনে কিংবা বাথরুমে ফেললে পাইপ আটকে যায়। ফলে পানি নির্গমন পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই আগে থেকেই জেনে রাখা জরুরি কোনো জিনিসগুলো কমোড ও বেসিনে ভুলেও ফেলা যাবে না।
চাল ও পাস্তা: পাস্তা ও চাল পানি শুষে নেয়, কিছু সময় পর প্রকৃত আকারের চেয়ে অনেক বড় হয়ে যায়। ফলাফলস্বরূপ জায়গাও নেয় বেশি। পাশাপাশি এগুলো পানিতে পুরোপুরি মিশে যেতেও প্রচুর সময় নেয়। সেজন্যে সহজেই পাইপের পথ আটকে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
ডিমের খোসা: অনেকেই মনে করেন যে ডিমের খোসা ভেঙ্গে গুঁড়া গুঁড়া করে ফেললে সেটা আর পাইপে আটকাবে না। ব্যাপারটা পুরোই ভুল। ডিমের খোসার ছোটো ছোটো টুকরোগুলো একটা আরেকটার লাগে লেগে বিশাল একটা অংশ তৈরি করতে পারে। এভাবে পাইপের পথটাই বন্ধ করে দেবে।
আটা: আটা পাইপে ঢুকলে বিপদ হতে পারে। আটা কখনোই রান্নাঘরের সিংকে ফেলা উচিত নয়। কারণ পাইপের ভেতরে এই আটা পানির সঙ্গে মিশে একটি আঠালো মিশ্রণ তৈরি করে। যা ধীরে ধীরে আরো ময়লাকে আকৃষ্ট করে। অবশেষে পানি আটকে যায়।
ওষুধ: অনেকের ধারণা ওষুধ খুব দ্রুত পানিতে গুলিয়ে যায়। আর এই ধারণা থেকে তারা মেয়াদোত্তর্ঢু ওষুধ সিংকে বা বেসিনে ফেলে দেয় যাতে সেগুলি ড্রেনে চলে যায়। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। ওষুধ সহজে পানিতে মেশে না, বরং সেটা পানিকে দূষিত করে। পানির ফিল্টার পানিতে থাকা সকল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও ওষুধের এই প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারে না। পানিতে দীর্ঘদিন থেকে যায় এই ওষুধের এই মিশ্রণটি। সেই পানির সংস্পর্শে এসে দুষিত হয় আরো পানি।
চুল: বাথরুমের পাইপের লাইনে যত কারণে বাধার সৃষ্টি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো চুল। চুল পাইপের ভেতর আটকে যায় এবং একটি ছোটো বলের মতন তৈরি করে। এই বলটি একটি জালের মতন অন্যান্য ছোটো ছোটো জিনিসপত্রকেও আটকে দেয়। ফলে পাইপের মধ্যে অনেক জঞ্জাল মিলে একটি বাধার সৃষ্টি হয় এবং পানি আর বের হতে পারে না।
কনডম: কনডম বাথরুমের পাইপে আটকে পাইপ বন্ধ হয়ে পানি যেতে না পারার ঘটনা আমাদের দেশে প্রচুর ঘটে। তবে এটি নিয়ে সেভাবে করে কখনো বলা হয় না। মনে রাখবেন, কনডম ল্যাটেক্সের তৈরি যেটা কখনোই পানিতে মিশে যায় না। ল্যাটেক্স অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রয়োজনে কয়েকগুণ পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। ভুল করেও কখনো একটি কনডম আপনার বাথরুমের পাইপে স্থান করে নিলে তার মধ্যে পানি থেকে শুরু করে সব প্রকারের ময়লা আবর্জনা গিয়ে জমবে এবং পুরো পাইপটাই বন্ধ হয়ে যাবে। আর এই সমস্যার সমাধানটাও খুব একটা সহজ হবে না।
সিগারেটের ফিল্টার: সিগারেটের ফিল্টারের প্রধান সমস্যা হলো, এটি পানি শুষে আরো তরতাজা হয়ে যায়। আর সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, এটা কখনো পুরোপুরি পানিতে মিলিয়ে যায় না। পাশাপাশি পানিকে বিষাক্ত করে দেয় সিগারেটের ফিল্টার। তাই সিগারেট শেষ করে সেটার ফিল্টার বাথরুমের বেসিন, কমোড বা রান্নাঘরের সিংকে ফেলার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। সিগারেটের ফিল্টারকে অ্যাশট্রেতে ফেলুন।
নারীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যক্তিগত জিনিসপত্র: আমরা সবাই জানি যে নারীদের ব্যবহৃত ট্যাম্পন বা স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রধান বিশেষত্ব হলো, এগুলি প্রচুর পরিমাণে পানি শুষে নিতে পারে। ছোট্টো একটি ট্যাম্পন পাইপে আটকে গেলে অনেক বড় বিপদ হতে পারে। তাই, ভুলেও এসব জিনিসপত্রকে কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করবে না।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে সবাই মহা আতঙ্কে। পুরো বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনামের ভাষা: করোনা ভাইরাস, সংক্রমণ, মৃত্যু, কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইন আর লকডাউন। কারণ এ ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই, নেই কোনো প্রতিষেধক।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা দিন রাত পার করছেন একটা ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরিতে।
এরইমধ্যে বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব। গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়া ও মূলধারার মিডিয়ায় ছড়িয়েছে নতুন আরেক গুজব, দিনে তিন বার চা খেলে নাকি ভয় নেই করোনায়। ভারতের টি বোর্ড থেকে ছড়িয়েছে এ গুজবের ডালপালা।
গুজব তথ্যে বলা হয়েছে, ইজরায়েলে আবিষ্কার হয়েছে করোনা সারানোর এক সহজ উপায়। গরম পানি, স্লাইস করা লেবু আর বেকিং সোডা মিশিয়ে চায়ের মতো খেলেই নিমেষে শেষ হয়ে যাবে করোনাভাইরাস। কারণ এতে শরীরের পিএইচ মাত্রা বেড়ে যায়। করোনাভাইরাসের পিএইচ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে। আপনার শরীরের পিএইচ মাত্রা এর চেয়ে বেশি হলেই নির্মূল হবে করোনাভাইরাস। ইজরায়েলিরা এই সহজ উপায়টি শিখে নিয়ে দিব্যি আছেন। তাই তাদের মধ্যে এই ভাইরাস নিয়ে কোনো আতঙ্ক নেই।
আরও একটি গুজব ছড়িয়েছে সিএনএন-এর একটি ব্রেকিং নিউজকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, চীনের যে চিকিৎসক প্রথম বার কোভিড-১৯ নিয়ে সতর্ক করেন, তিনি নিজে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেলেও এর নিরাময়ের উপায় বলে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন মিথাইলজ্যানথাইন, থিওব্রোমিন বং থিওফাইলিন, এই তিন যৌগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এই ভাইরাসের সংক্রমণ আটকায়। এই তিনটি যৌগই পাওয়া যায় চা পাতায়। চীনারা কভিড-১৯ আক্রান্তদের দিনে ৩ বার চা খাইয়ে সারিয়ে তুলছেন। এ ভাবেই উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোও আটকানো গেছে। থেমেছে কমিউনিটি সংক্রমণও। ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ, প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা হয়েছে এগুলো। হোয়াটসঅ্যাপেও ছড়িয়ে পড়ছে এমনই সব মেসেজ। এমনকি কিছু মিডিয়াতেও এমন আজগুবি খবর প্রচার করা হয়েছে।
এই তথ্য কি সঠিক?
না, যে সব উপায়গুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ এখনো বিশ্বের কোথাও নেই। ইজরায়েলে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। চীনেও চা খেয়ে লোকে সুস্থ হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ইজরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১৭১। সে দেশে সরকারি ভাবে এ ধরনের কোন ওষধি পানীয়ের কথা বলা হয়নি। যে ভাবে লেবু আর বেকিং সোডা মেশানো পানীয় খেয়ে শরীরের পিএইচ মাত্রা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জাঁ ফিলিপ বঁজু-র একটি গবেষণাপত্র বলছে ডায়েটে পরিবর্তন ঘটিয়ে এভাবে শরীরের পিএইচ মাত্রায় পরিবর্তন ঘটানো যায় না। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর একটি ব্লগ বলছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই যেখানে দেখা গেছে লেবু বা রসুন এই নতুন করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে।
দিনে তিন বার চা খেয়ে চীনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর যে কথা বলা হচ্ছে। চা, কফি, চকোলেটে উপস্থিত মিথাইলজ্যানথাইন। এই যৌগ ঝিমুনি কাটিয়ে শরীরকে চনমনে করতে সাহায্য করলেও তা যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আটকায়, তার কোনো প্রমাণ নেই। ভাইরাল হওয়া দ্বিতীয় মেসেজটিতে সিএনএন-এর একটি ব্রেকিং নিউজের কথা বলা হয়েছে। সিএনএন এমন কোনও খবর আদৌ প্রচার করেনি। লি ওয়েনলিয়াং বলে যে চিকিৎসকের কথা বলা হয়েছে, কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ৭ ফেব্রূয়ারি মারা যান। তিনি ছিলেন পেশায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ। ভাইরাস নিয়ে তার কোনো গবেষণা ছিল না।
এমনিতে আমাদের রোজকার অভ্যাসে গলা খুসখুস করলে গরম পানীয় দিয়ে গড়গড়া করা, গলা ব্যথা হলে আদা দিয়ে চা খেয়েই থাকি। কিন্তু সে সবে যে করোনাভাইরাস আটকাবে না। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। সূত্র: আনন্দবাজার