ভিপি নূরের তহবিলের একটাকাও খরচ হয়নি

47

বর্তমান ডাকসুর মেয়াদের আর মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও নিজের বরাদ্দের এক টাকাও ব্যয় করতে পারেননি ভিপি নুরুল হক নূর।
১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বেশি তহবিলের মধ্যে ৮৬ লাখ টাকা খরচের যে হিসাব ডাকসুর কর্মকর্তারা করেছেন তাতে দেখা যায়, ভিপির পাশাপাশি জিএসও তার বরাদ্দকৃত অর্থ তোলেননি। তবে বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্যরা জিএসের অনুক‚লে বরাদ্দ করা অর্থ তুলে ব্যয় করেছেন।
ভিপি নূর তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় না হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়াকে কারণ দেখিয়েছেন। তবে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ভিপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রায় তিন দশক পর গত বছরের ১১ মার্চ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান ডাকসু গঠিত হয়। ভিপি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক বাদে বাকি প্রতিটি পদেই জয়ী হন ছাত্রলীগের নেতারা। দায়িত্ব গ্রহণের পর ৩০ মে ডাকসুর বাজেট পাস হয়। তাতে ভিপির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৫ লাখ টাকা। জিএসের জন্য তিন খাতে মোট ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে অভিষেক অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ৩০ লাখ, সাধারণ অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ১৭ লাখ টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ৫ লাখ টাকা। খবর বিডিনিউজের
সম্পাদকদের মধ্যে সাতজনের নাম বরাদ্দ রাখা হলেও এজিএস ও ১৩ জন সদস্যের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ ছিল না। জিএসের সহায়ক হিসেবে এজিএস ও ৯ জন সম্পাদকের সঙ্গে ১৩ জন সদস্যের কাজ করার কথা বলা হয়েছিল। সম্প্রতি ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভা উপলক্ষে ডাকসুর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ব্যয়ের একটি ফর্দ ডাকসুর প্রতিনিধিদের দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, ডাকসুর ১৬ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য খরচ করেছেন ৮৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০৪ টাকা। এছাড়া ডাকসু কার্যালয় ব্যবস্থাপনা খাতে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
ভিপি নূর জানান, আমার জন্য ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু আমি এক টাকাও তুলতে পারিনি। সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীদের র‌্যাগ ডে উদযাপনের জন্য ১০ হাজার টাকা, শামসুন্নাহার হলের একজন ছাত্রীর একটি রেসিং সাইকেল কেনার জন্য আমি ডাকসুর ফান্ড থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলাম। এছাড়া মেয়েদের হলে প্রোগ্রামের জন্য আরও ২০ হাজার টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই টাকার অনুমোদন পাইনি আমি। আমাকে নামে মাত্র ডাকসুর এক্সিকিউটিভ কমিটিতে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যত খরচ হয়েছে, জিএস ও এজিএসের সিদ্ধান্তেই সব হয়েছে বলে জানান ভিপি।
নূরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, নুর টাকা চেয়ে পায়নি, এটা আমাকে তো কোনোদিন বলেনি। তবে ব্যক্তিগত বিষয়ে যেটা চেয়েছিল, ডাকসুর টাকা তো কারও সাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য নয়।
এরপর প্রতিবেদকের সামনেই তিনি ভিপি নুরকে ফোন দিয়ে সরাসরি কথা বলেন। তখন ভিপি নুর বলেন, আমি তো আপনার (অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াৎ) নামে অভিযোগ করিনি। আমি তিনটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু কী কারণে সেটি অনুমোদন হয়নি, সেটি জানি না।
তখন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াৎ ভিপি নূরকে বলেন, ডাকসুর টাকা ছাত্রদের সামগ্রিক কল্যাণে ব্যয় হবে, ব্যক্তিগত কারও জন্য তো এই টাকা খরচ করা যায় না। নূর তা মেনে নেওয়ার পর শিবলী রুবাইয়াৎ বলেন, তোমাকে তো কখনও মানা করিনি। তোমার লাগলে নাও, খরচ কর।
এ ব্যাপারে ভিপি নূর জানান, কোষাধ্যক্ষ অনুমোদন দেননি, তিনি তা বলেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন, তার প্রস্তাবগুলো কী কারণে যেন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সুফিয়া কামাল হলের র‌্যাগ ডে, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা সফরের জন্য অনুমোদন না পাওয়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভিপি নুর। এরকম কয়েকটি ঘটনার পর তিনি আর খরচের জন্য কোনো অর্থ চাননি বলেও জানান।
প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভিপি, জিএস ও এজিএস এক টাকাও উত্তোলন করেননি। বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্যদের মাধ্যমে তারা টাকা উত্তোলন করেছেন এবং প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে তার ভাউচার দিয়েছেন।
ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ফান্ড থেকে আমি কোনো টাকা তুলিনি। ডাকসুর ১৩ জন সদস্যের তো কোনো বরাদ্দ নেই। তারা যেসব কাজ করেছে, সব আমার বরাদ্দ থেকে ব্যয় করেছে। আমি আমার ব্যক্তিগত কোনো কাজ বা প্রোগ্রামের জন্য টাকা তুলিনি।
জিএসের তত্ত¡াবধানে কত টাকা খরচ হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক হিসাবটা এখন বলতে পারব না, অডিট হলে বিষয়টা বলা যাবে। তবে টোটাল হিসেবটা আমি জানি। ডাকসুর বাজেট হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ। এ পর্যন্ত আমাদের খরচ হয়েছে ৮৪ লাখ টাকার মতো।
প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, তিনি ১০ মাসের ব্যয়ের একটি হিসাব শুধু ডাকসুর প্রতিনিধিদের দিয়েছেন। গণমাধ্যমে দেওয়া হবে নিরীক্ষিত প্রতিবেদন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্য ডাকসুর ফান্ড থেকে যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেছে, তার একটি বিবরণী গতকাল আমি ডাকসুর প্রতিনিধিদের দিয়েছি। কিন্তু এই কপি আমি কোনো সাংবাদিককে দিইনি। ওই বিবরণীতে ডিসেম্বর মাস (২০১৯) পর্যন্ত উত্তোলিত টাকার হিসাব উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যয়কৃত অর্থের অডিট সম্পন্ন করা হলে পুরো হিসাবটা আমরা গণমাধ্যমে দিতে পারব।
খসড়া হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়, ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৪ টাকা, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিন ৬ লাখ ৭১ হাজার ৯০০ টাকা, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ৭ লাখ ৮২ হাজার ১২০ টাকা, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী ৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস-ঈ-নোমান ৫৮ হাজার ৭০০ টাকা তুলেছেন।
এছাড়া ডাকসুর সদস্যদের মধ্য থেকে তানভীর হাসান ৯০ হাজার টাকা, রাকিবুল হাসান ৬১ হাজার ৭০০ টাকা, রাইসা নাসের ৭৪ হাজার ৫০ টাকা, রকিবুল ইসলাম ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, মুহা. মাহমুদুল হাসান ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা, রফিকুল ইসলাম ৩০ হাজার টাকা, ফরিদা পারভীন ৬১ হাজার ৫০০ টাকা, সাইফুল ইসলাম ১ লাখ টাকা এবং যোশীয় সাংমা তহবিল থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলেছেন।
অন্যদিকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্পন্সর থেকে ডাকসু ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০৪ টাকা পেয়েছেন বলে বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।