ভিন্ন স্বাদের ইফতারি নিয়ে জমজমাট স্টেডিয়াম পাড়া

158

বাঙালির ইফতার মানেই ছোলা-পেঁয়াজুর মহোৎসব। টেবিলে ছোলা-পেঁয়াজু না থাকলে অনেকের কাছে ইফতারের মজাটাই ম্লান হয়ে যায়। তবে দিন পাল্টাচ্ছে। পাল্টাচ্ছে মানুষের স্বাদ ও রুচি। তাই চট্টগ্রামের ইফতার সংস্কৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। অসংখ্য রোজাদার ছোলা-পেঁয়াজু ছাড়াও এখন ভিন্ন স্বাদের নতুন নতুন আইটেমও রাখছেন ইফতারির তালিকায়।
নগরী জনপ্রিয় স্টেডিয়াম পাড়ায় বিকল্প ইফতারের আয়োজনই বেশি। চিকেন-বিফের তৈরি হরেক রকম খাবার, বিরিয়ানী এবং মিষ্টি খাবারের দখলে কাজীর দেউড়ি এলাকা ও স্টেডিয়াম ঘিরে গড়ে উঠা রেস্টুরেন্টগুলো। এখানে বিক্রি হচ্ছে নানা স্বাদ ও রুচির ইফতারি। গতকাল সরেজমিনে ইফতারি আয়োজনের এমনই চিত্র দেখা যায়।
১৯৭৪ সালে দারুল কাবাব দিয়ে শুরু হওয়া এ এলাকায় এখন রেস্টুরন্টেনের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত। সবগুলো রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয়। রমজান ছাড়াও ভোজন রসিকদের জন্য নিত্যদিনের মিলনমেলা হয়ে উঠে এসব রেস্টুরেন্ট। এসবের মধ্যে রয়েল হাট, রেড চিলি, সাকুরা কাবাব, দারুল কাবাব, কেজিএন, রোদেলা বিকেল, সাব জিরো, টেস্ট অব চিটাগাং, টেন ইলেভান, দি গ্যালারি, কপারস্ অন্যতম। এসব রেস্টুরেন্টে নিয়মিত ইফতারির পাশাপাশি রয়েছে মেজবানির মাংস, ডাল ও বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন খাবার।
১৯৮৭ সালে রেড চিলির যাত্রা। এ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জহির উদ্দিন জানান, এখানে ৪৫ ধরনের ইফতার রয়েছে। এসব ইফতার পার্সেল আকারে ও রেস্টুরেন্টে পরিবেশন করা হয়। রেস্টুরেন্টে কয়েকটি প্যাকেজে গ্রাহকরা নিতে পারবেন। যেগুলোর দাম রাখা হয়েছে ৩৯০ টাকা, ৪৯০ টাকা এবং ৫৫০ টাকা। প্রতিটি প্যাকেজে নিয়মিত ইফতারের পাশাপশি রয়েছে ফ্্রাইড চিকেন, জুস, চিকেন কাবাব।
তিনি আরও বলেন, প্রতি শুক্রবার রয়েছে স্পেশাল আয়োজন। এর মধ্যে ৫শ টাকা দামের মাটন নালী ও ৪শ টাকা দামের চিকেন আদরাক বেশ জনপ্রিয়। সাধারণ ইফতারের চেয়ে বিকল্প ইফতারের আয়োজন বেশি। কেননা চট্টগ্রামের মানুষ খাবারের বেলায় সর্বদা নতুনত্ব খোঁজেন।
এ কথার প্রমাণ মেলে খুলশি থেকে ইফতারি কিনতে আসা এনজিও কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের কথায়। তিনি বলেন, আমি কক্সবাজার থেকে ছুটিতে এসেছি। ছোলা-পেঁয়াজু তো ছোটকাল থেকেই খেয়ে আসছি। এখন একটু ভিন্নতা প্রয়োজন। তাই ট্রেডিশনাল ইফতারের পাশাপাশি বিকল্প কিছু কিনতে এখানে আসা। তবে তিনি বাড়তি দামের বিষয়ে আপত্তি তোলেন।
কী কী কিনবেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরিয়ানী নিব। সাথে কিছু মিষ্টান্ন খাবার কিনতে চাই। তবে বাড়ির ছোটদের পছন্দ চিকেনের ফ্রাইড খাবার। তাই ওইরকম কিছু কিনতে হবে।
বিকল্প ইফতারের নিদর্শন মেলে স্টেডিয়াম পাড়ার দি গ্যালারি রেস্তোরাঁয়। সেখানে পাঁচটি সেট মেন্যুর তিনটিতেই অনুপস্থিত ছোলা-মুড়ি। তার জায়গায় আছে ফ্্রায়েড রাইস, গ্রিলড সাসলিক, তন্দুরি চিকেন, বসনিয়ান রুটি, আইসক্রিমের মতো ইফতার সামগ্রী। ক্রেতাদেরও আগ্রহ দেখা গেল ছোলা, পেঁয়াজুহীন এসব সেট মেন্যুতে। কারণ জানতে চাইলে চকবাজার থেকে আসা রাফসান নামের এক ক্রেতা বলেন, চট্টগ্রামে সাধারণত ১২ মাসই ছোলা-পেঁয়াজু পাওয়া যায়। তাই খাবারে নতুনত্ব আনতেই এই বিকল্প ইফতারি।
ওই এলাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট ধরা হয় রয়েল হাটকে। দামে কম ও স্বাদে অনন্য নান খাবারের এ রেস্টুরেন্টে ক্রেতাদের সমাগম তুলনামূলক বেশি। তবে এখানেও ইফতারি আয়োজনের সিংহভাগই দখল করেছে চিকেনের নানা মুখরোচক খাবার। এর মধ্যে চিকেন কাবাব, তান্দুরি চিকেন, টিক্কা, ঝাল ফ্্রাই, চিকেন শর্মাসহ আরও বাহারী পদ।
এ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার প্রতাপ জানান, আমাদের প্রায় ৫০ আইটেমের ইফতার রয়েছে। সবগুলোর দাম সাধারণ মানুষের নাগালে। সারাবছর ক্রেতাদের সেবায় রয়েল হাট কর্তৃপক্ষ নিয়োজিত, রমজানে সেবার মান আরও বেড়েছে। সারা চট্টগ্রামে অন্যসব জায়গা থেকে স্টেডিয়ার পাড়ায় ইফতারি বিক্রির ধুম পড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে ভিন্ন কথা বলেছেন, দারুল কাবাবের ম্যানেজার আলমগীর। তিনি বলেন, স্টেডিয়াম পাড়ায় এখন রেস্টুরেন্টের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতা বাড়েনি, তাই ব্যবসা আগের মত নেই। আমরা যখন ১৯৭৪ সালে শুরু করি, তখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন ইফতারি কিনতে। তখন ছোলা-পেঁয়াজুর বাইরে ইফতার সামগ্রী তৈরি করতাম আমরাই। এখন সে জৌলুস নেই।