ভিডিও কনফারেন্সে বিচারের ব্যবস্থা করতে ‘প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ’

33

যে আসামিদের আদালতে হাজির করায় ঝুঁকি রয়েছে, তাদের কারাগারে রেখেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী আবারও তাগিদ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেন। ঝুঁকিপূর্ণ আসামিদের কারাগারে রেখে ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করার মতো ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক কারাগারে এমন একটি জায়গা তৈরি করতে হবে যেখান থেকে বিচারক ওই আসামিকে ভার্চুয়ালি দেখে বা জেনে বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারবেন।
২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গুলি চালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে প্রিজনভ্যান থেকে জেএমবির তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারের বিষয়টি জোরের সঙ্গে আলোচনায় আসে। এর দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এটুআই প্রোগ্রামের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাও বিচার কাজে গতি আনতে এবং আসামি হাজিরের ঝুঁকি ও ঝামেলা কমতে ‘ডিজিটাল পদ্ধতি’ চালুর উদ্যোগের কথা বলেন।
২০১৭ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য নবনির্মিত বাসভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়োজনে দুর্ধর্ষ আসামিদের ক্ষেত্রে তাদের আদালতে হাজির না করেই যাতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার চালানো যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।
এর ধারাবাহিকতায় বিচারকাজে প্রযুক্তির ব্যবহার যুক্ত করতে একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হয় এবং ২০১৭ সালে তা মতামতের জন্য আইন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ‘সাক্ষ্য ও বিচারিক কার্যক্রম (তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার) আইন, ২০১৭’ শীর্ষক ওই খসড়ায় বলা হয়, আদালতে হাজির না হয়েও আদালত কক্ষের বাইরে থেকে কোনো পক্ষ, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা আইনজীবী ‘অডিও-ভিজ্যুয়াল’ সংযোগের মাধ্যমে বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন। ভিডিও কনফারেন্স ও টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে এজলাস থেকে দূরে অবস্থান করেও তারা বিচার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। বিচারক বিশেষ ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও আইনজীবীদের উপস্থিতি ও সাক্ষ্য নিতে পারবেন।
তবে এ পদ্ধতিতে সাক্ষ্য দিতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে সব পক্ষের টেলিফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা এবং তাদের সনাক্ত করতে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিস্তারিত তথ্য জানানোর শর্ত রাখা হয় ওই খসড়ায়। সেখানে বলা হয়, অডিও-ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সাক্ষীর উপস্থিতি বা সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদনের সময় সরকার নির্ধারিত কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, ‘এটা এখনও ফিল্ড স্টাডির পর্যায়ে আছে। এটা নিয়ে আমাদের আরও সেমিনার-টেমিনার করতে হবে। তারপরে আরকি’। ফিল্ড স্টাডি হতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো সময় উল্লেখ করে বলতে পারব না। আমরা সবাই স্টাডি করছি। মিনিস্ট্রি একটা বানাচ্ছে আমরা একটা বানাচ্ছি। দুইটা দুরকম এই আরকি’। দুটো খসড়া হওয়ার পর সমন্বয় করে নতুন আইনটি হবে কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমাদেরটা হয়ে গেলে আমরা সেটা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। আমাদের দৌড় তো এ পর্যন্তই’।