ভারতে ভোটাধিকার বঞ্চিত লাখ লাখ গৃহহীন মানুষ

118

আগামী ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না দেশটির লাখ লাখ মানুষ। ভোটাধিকার বঞ্চিত এই নাগরিক মূলত নারী ও গৃহহীন মানুষ। যে নির্বাচনে জিতে এসে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে নির্বাচনের কোনও আবেদন নেই ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার এই মানুষগুলোর কাছে।
১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া নির্বাচন চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। পাকিস্তানের সঙ্গে সা¤প্রতিক উত্তেজনার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের নির্বাচন। তবে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে জাতীয়তাবাদের আওয়াজ তুলে সহজেই ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে মোদি সরকার। তবে হামলা চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করা একটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান। আটক করা হয় এর ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। পরে পাকিস্তান তাকে ফেরত দিলে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়ে আসে। কিন্তু দুই দেশের এই সংঘাত ঘিরে যেখানে উগ্র জাতীয়তাবাদের বার্তা ছড়ানো হয়েছে, সেখানে নিজ দেশেই অবজ্ঞা-উপেক্ষা আর অবহেলায় রয়ে গেছেন ভোটাধিকার বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ। সনাক্তকারী কাগজপত্র না থাকায় জটিলতায় পড়েছেন তারা। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছে, এই জনসমষ্টি নিজ দেশেই ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন এই বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে উঠছে। নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছরের অধিক বয়সী ভারতের সব নাগরিক দেশটির ভোটার হওয়ার যোগ্য। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কর্তৃপক্ষের চেষ্টা সত্তে¡ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন আনুমানিক ৪০ লাখ মানুষ। তবে এই আবাসন ইস্যু সজাগ নির্বাচন কমিশনও। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গৃহহীন এই মানুষদের একটি সাময়িক ঠিকানার আওতায় আনা হবে। এর আওতায় গৃহহীন মানুষেরা তাদের ঠিকানা হিসেবে নাইট শেল্টার, ফ্লাইওভার এবং সড়কবাতির স্থানকেও ব্যবহার করতে পারবেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১০ হাজার মানুষ এর আওতায় পড়েছিলেন। কিন্তু সে সময় মাত্র তিন হাজারের কিছু বেশি মানুষ এ পদ্ধতিতে নিজেদের তালিকাভুক্ত করেছিলেন।
অ্যাডভোকেসি গ্রুপ শাহারি অধিকার মঞ্চের অশোক পান্ডের মতে, গৃহহীন মানুষের জন্য এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন কঠিন। কেননা এসব মানুষের মধ্যে স্থানান্তরের এক ধরনের প্রবণতা কাজ করে। অথচ যাচাইয়ের সময় প্রদত্ত ঠিকানায় পাওয়া না গেলে তাদের নাম বাতিল করে দেওয়া হবে। এটি একটি সমস্যা, কেননা তারা নির্দিষ্ট একটি জায়গায় স্থির থাকে না।
অশোক পান্ডে বলেন, তাদের গৃহহীন হওয়ার বিষয়টি আসলেই এখানে বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়। তারা এখনও নাগরিক এবং তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। ভারতের নির্বাচনে নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ এমনিতেই তুলনামূলক কম। এর কারণ যতটা না আমলাতান্ত্রিক, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে সামাজিক চাপের বিষয়টি। নির্বাচন বিশ্লেষক প্রণয় রায় এবং দোরাব সোপারিওয়ালা’র মতে, নারীদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি তাদের চারপাশের মানুষের দ্বারা ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত হয়। আইনগতভাবে ভোট দেওয়ার যোগ্য হলেও ভারতীয় নারীরা প্রায়ই ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ করে থাকেন। কয়েক দশক ধরে নিবন্ধন না করায় ভোটার তালিকায় নাম নেই দুই কোটি ১০ লাখ নারীর। ভারতের নির্বাচন নিয়ে প্রণয় রায় এবং দোরাব সোপারিওয়ালা তাদের ‘দ্য ভারডিক্ট’ বইতে লিখেছেন, বছরের পর বছর ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের এই পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। সূত্র: এক্সপ্রেস ইউকে।