ভারতে অবৈধ বাংলাদেশি থাকলে তালিকা দিক

54

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতে যদি অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তি থাকে, তাহলে ভারত সরকারের কাছে আমরা তাদের নাম ঠিকানা জানতে চাইবো। এরপর যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশি হলে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে।
সম্প্রতি বিবিসি বাংলার টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রবাহে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে নাগরিক পঞ্জী বা এনআরসি প্রকাশের পর বহু লোক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসছেন।
এ কে আব্দুল মোমেন বিবিসিকে বলেছেন, এরকম লোকজনের বাংলাদেশে চলে আসার কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি, তাতে প্রায় তিনশো জনের মতো ধরা পড়েছে আমাদের সীমান্তে। যদি আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকে এবং তারা যদি অবৈধভাবে ভারতে থাকেন, তাহলে আমরা চাইবো, যারা অবৈধ, ভারত তাদের নাম-ঠিকানার একটি তালিকা আমাদের দিক। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখবো আমাদের নাগরিক কিনা। আমাদের নাগরিক হলে অবশ্যই আমরা স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ওই তালিকাটি তারা এখনো চাননি।
তবে পত্রপত্রিকায় বলা হচ্ছে যে, ভারত থেকে অনেক লোক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। স¤প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। সফর বাতিলের কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে, বিজয় দিবসের আগে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততার কারণে মন্ত্রীরা এই সফর বাতিল করেছেন।
তবে বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের এনআরসি এবং পরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পার্লামেন্টে উত্থাপনের সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ অস্বস্তিতে পড়েছে এবং এই সফর বাতিলের মাধ্যমে তার একটা প্রকাশ দেখানো হয়েছে। এরকম সময়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলো।
কবে নাগাদ এই তালিকা চাওয়া হতে পারে, জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন-তখন চাইতে পারি। এটা এখনো যেহেতু আনুষ্ঠানিক কিছু না, যেহেতু এগুলো সব মিডিয়ায় বলা হচ্ছে। ভারত সরকার আমাদের বলেছে যে, তারা কাউকে জোর করে আমাদের দেশে পাঠাচ্ছে না। তাহলে আমরা কেমন করে চাইবো। তবে আমি বলছি, আমাদের বাংলাদেশি নাগরিক যদি কেউ অবৈধভাবে ভারতে থাকে, তারা যদি বাংলাদেশে ফিরতে চায়, ভারত সরকার আমাদের জানায়- আমরা অবশ্যই তাদের নিয়ে আসবো।
ভারতে নাগরিক পঞ্জী প্রকাশ ও নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর ভয়ে অনেক বাংলাদেশি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসছে বলে গণমাধ্যমে যে খবর বেরিয়েছে- তার আলোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশিরা নিজেরাই যদি ভয়ে চলে আসে তাহলে জোর করে পাঠানোর দরকার আছে কি? উত্তরে আবদুল মোমেন বলেন, ‘কেন আসবে? ভয়ে আসার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি না, আমাদের বিরাট সংখ্যক মানুষ ভারতে অবৈধভাবে আছে’।
বিবিসি বলছে, গত এক মাসে শুধু ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে তিন শতাধিক মানুষকে আটক করেছে বিজিবি। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, যে সংখ্যায় মানুষ আটক হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে।
ভারতের সাথে সীমান্তে পাহারা বা নজরদারি বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই বেশি বেশি করে বলছেন। বিবিসি বলার ফলে বাংলাদেশে বাকি পত্রপত্রিকাগুলোয় বলা হচ্ছে, আপনারাই এই ইস্যুগুলোকে সামনে তুলে আনছেন। আমরা ঠিক জানি না এখনো। আপনারা বলেছেন বলে আমরা বলেছি, বাংলাদেশের সরকার, বাংলাদেশি সব নাগরিককে, যদি তারা বিদেশ- ভারতে অবৈধভাবে থাকে, আমরা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে তাদের নিয়ে আসবো’।
বিবিসি জানিয়েছে, গত ৯ ডিসেম্বর রাতে মহেশপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিজিবি সদস্যদের হাতে আটক হয় ১২ জন। এর মধ্যে রবু নামের একজন ছোট ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছেন। সপরিবারে থাকতেন ভারতের মুম্বাই শহরে। তার দাবি, ভালো কাজের সুযোগ পেতে বাংলাদেশ থেকে তিনি কয়েক বছর আগে ভারতে গিয়েছিলেন। দুই সন্তান নিয়ে আটক হয়েছেন রাবেয়া হাওলাদার। আট বছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুরো পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তার ছেলের জন্ম হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশে নড়াইল জেলার কালিয়াতে তার বাড়ি বলে দাবি করেন তিনি।
এই সংক্রান্ত বিবিসি বাংলার এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঠিক জানি না, আমাদের কাছে সরকারি তথ্য না হওয়া পর্যন্ত উই ডোন্ট ট্রাস্ট ইট। সীমান্তে যদি লোকজন আসে, তাহলে আমাদের খবর দেবে। এখানে বর্ডার গার্ড আছে, তারা আমাদের খবর দেবে’।
ভারত থেকে বাংলাদেশে গোপনে জোরপূর্বক ‘পুশব্যাক’ চলছে এমন অভিযোগ নিয়ে ভারতের মানবাধিকার কর্মীরাই সোচ্চার হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলায় অনুপ্রবেশের খবর আসছে। ভারত থেকে বাংলাদেশিরা চলে আসছে, বা চলে আসতে পারে, এরকম কোনো আশংকা কি বাংলাদেশ সরকারের আছে?
এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা বিবিসি আশংকা করছে, আমরা আশংকা করি না। আমরা ভারত সরকারকে বিশ্বাস করি। তারা আমাদের বলেছেন যে, এনআরসি কিংবা এরকম কোনো কারণ কোনোভাবে বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে না’।