ভারতের দিকেই যাচ্ছে ‘ফণী’ বাংলাদেশেও পড়বে প্রভাব

47

চার দিন সাগরে অবস্থানের ফলে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এটিকে এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। ঝড়টির গতিবেগে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হওয়ার লক্ষণ দেখা না গেলেও সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিস আগামি শুক্রবার (৩ মে) নাগাদ ঝড়টি ওডিশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, সাধারণত একটি ঝড়ের গতি এবং ব্যাসের ওপর নির্ভর করে ঝড়টি কি পরিমাণ শক্তিশালী আর সেটি যখন উপকূলে আছড়ে পড়বে তখন আশেপাশের কতটুকু এলাকায় তার প্রভাব পড়বে। সাধারণত বড় ঝড়গুলোর কেন্দ্র থেকে পুরো ঝড়ের ব্যস হয় ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। যদি ঝড়ের সামনের অংশটি ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানে তাহলে সেটি যদি সামান্য পরিমাণ টার্ন করে তখন পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ঝড়ের গতিবেগ ও ব্যাসের পরিমাণ হিসেব করে যা দেখতে পাচ্ছি তাতে আমরা দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দিয়েছি। কোনও কারণে যদি আমরা চার নম্বর সিগন্যাল দেই তাহলে বুঝতে হবে এই ঝড়টি বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হবার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অফিস আকুওয়েদার জানায়, তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা সিভিয়ার সাইক্লোনের আকার নিয়ে ওডিশা উপকূলের দিকে এগুচ্ছে ফণী। এর প্রভাবে তামিলনাড়ু ও শ্রীলংকায় প্রচুর বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে ভারতের আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে- চেন্নাই থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। শুক্রবার ঝড়টি ১৯৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তাদের আবহাওয়া অফিস। ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ১২৬ বছরের (১৮৯১-২০১৭) মধ্যে দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড় এটি, যার উৎপত্তি এপ্রিল মাসে এবং বঙ্গোপসাগরের ওপর। প্রথমটি এসেছিল ২০০৮-এ। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ছিল ‘নার্গিস’।
এদিকে ঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তাপ প্রবাহ খুব সামান্য পরিমাণ কমেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া অন্য বিভাগেও তাপমাত্রা গত দিনের তুলনায় কম। মঙ্গলবার রাজধানীতে তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ময়মনসিংহে ৩১ দশমিক ৩, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ৩, সিলেটে ৩০, রংপুরে ৩১ দশমিক ২, খুলনায় ৩৫ দশমিক ৮ এবং বরিশালে ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।