ভারতকে কাঁপিয়ে হেরে গেল আফগানিস্তান

36

অঘটনের জন্ম দিতে পারেনি আফগানিস্তান। রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে ভারতে কাঁপিয়ে শেষ পর্যন্ত ১১ রানে হার মেনেছে গুলবু্িদ্দন নাইবের দল। সাউথ্যাম্পটনের রোজ বৌলে গতকাল আগে ব্যাট করা ভারতকে ২২৪ রানে আটকে দিয়ে লক্ষ্য তাড়ায় ২১৩ রানে থেমে যায় আফগানিস্তান ইনিংস।
২২৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ২০ রানে প্রথম উইকেট হারায়। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে জাজাইকে বোল্ড করেন পেসার শামি। এর পর রহমত শাহ ও অধিনায়ক গুলবাদিন ৪৪ রানের জুটি গড়েন। ১৬.৫ ওভারে দলীয় ৬৪ রানে নাইবকে ব্যক্তিগত ২৭ রানে ফেরান হার্দিক পান্ডিয়া। তৃতীয় উইকেট জুটিতে রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ শহিদি মিলে তোলেন ৪২ রান। এর পর ২৯তম ওভারের চতুর্থ ও শেষ বলে এই দুজনকে তুলে নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন দুরন্ত বুমরা। ক্রিজে আসেন অভিজ্ঞ আসঘর আফগান ও মোহাম্মদ নবি। ১৩০ রানে ব্যক্তিগত ৮ রানে আসঘর আফগানকে সরাসরি বোল্ড করেন যুজবেন্দ্র চাহাল। আসঘর আফগান ফিরে গেলে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে মোহাম্মদ নবি গড়ে তোলেন ৩৬ রানের জুটি। তবে ৪১.৩ ওভারে দলীয় ১৬৬ রানে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে চাহালের ক্যাচে পরিণত করেন হার্দিক পান্ডিয়া। ফেরার আগে জাদরান খেলেন ২৩ বলে ২১ রানের ইনিংস। এ অবস্থায় রশিদ খান নামেন ব্যাট হাতে। মোহাম্মদ নবির সতীর্থ হয়ে ২৩ বলে চব্বিশ রানের জুটি গড়েন দু’জনে। ৪৫.৪ ওভারে যুজবেন্দ্র চাহালের বলে এমএস ধোনির স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় রশিদ খান ১৬ বলে ব্যক্তিগত ১৪ রান করে দিয়ে যান। সতীর্থ হিসেবে নবি পায় উইকেটরক্ষক ইকরাম আলি খিলকে। সাত উইকেটে আফগানদের সংগ্রহ ১৯০ রান।
শেষ তিন ওভারে আফগানদের প্রয়োজন ২৩ রান। স্ট্রাইকে ইকরাম আলি খিল। বোলিংয়ে আসেন মোহাম্মদ শামি। এ ওভার থেকে আসে মাত্র দুই রান। ফলে জয় পেতে আফগানদের দরকার ১২ বলে ২১ রান। বোলার বুমরাহ। স্ট্রাইকে নবি। প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় দুই রান নেন। তৃতীয় বলে এক। চতুর্থ বল থেকে ইকরাম আলি খিল কোন রান নিতে পারেননি। পঞ্চম বলে এক। ওভারের শেষ বলে আবারো এক রান। শেষ ওভারে জয় পেতে ১৬ রান প্রয়োজন। বোলার মোহাম্মদ শামি। প্রথম বলে চার মেরে নিজের হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মোহাম্মদ নবি। পাঁচ বলে দরকার ১২ রান। দ্বিতীয় বলে কোন রান নয়। স্ট্রাইকে নবি। তৃতীয় বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ধরা পড়েন। চতুর্থ বলে আফতাব আলমের স্টাম্প উড়িয়ে দেন শামি। দশম অর্থাৎ শেষ উইকেটে ব্যাট হাতে স্ট্রাইকে আসেন স্পিনার মুজিবুর রহমান। মোহাম্মদ শামির সামনে হ্যাটট্রিকের সুযোগ। পঞ্চম বলে ফের মুজিবের স্টাম্প উড়িয়ে চলমান বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক পূরণ করে তিনি। সাথে ১১ রানে জয় নিশ্চিত হয় ভারতের।
ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি চারটি, জাসপ্রিত বুমরাহ, যুজবেন্দ্র চাহাল ও হার্দিক পান্ডিয়া প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে পঞ্চম ওভারেই দলীয় ৭ রানে ভয়ংকর রোহিত শর্মাকে হারায় ভারত। মুজিব উর রহমানের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে রোহিত বোল্ড হন ১ রানেই।
দ্বিতীয় উইকেটে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটি কোহলির। দেখেশুনে খেলতে থাকা রাহুলকে (৩০) সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ নবী। ৬৪ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপেই পড়ে ভারত।
সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা কোহলি আর বিজয় শঙ্করের, তৃতীয় উইকেটে তারা গড়েন ৫৮ রানের জুটি। ২৯ রান করা বিজয় শঙ্করকে এলবিডবিøউ করে এই জুটিটি ভাঙেন রহমত শাহ।
এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খায় ভারত। দলের ব্যাটিং স্তম্ভ বিরাট কোহলি ৬৩ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৬৭ রান করে মোহাম্মদ নবীর শিকার হন। ১৩৫ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত।
পঞ্চম উইকেটে বিপদ সামলে উঠেন অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি আর কেদার যাদব। তবে হাত খুলে খেলতে পারেননি তারাও। ১৪ ওভারের জুটিতে মাত্র ৫৫ রান তুলতে পারেন এই যুগল।
অবশেষে ৪৫তম ওভারে এসে ধোনিও আউট হয়ে যান। ৫২ বলে ২৮ রানের ধীরগতির এক ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যান রশিদ খানের বলে চড়াও হতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। হার্দিক পান্ডিয়াও (৯ বলে ৭) ভয়ংকর হতে পারেননি।
এরই মধ্যে শেষ ওভারে চমক দেখান গুলবাদিন নাইব। তুলে নেন জোড়া উইকেট। মোহাম্মদ শামির (১) সঙ্গে হাফসেঞ্চুরিয়ান কেদার যাদবকেও (৬৮ বলে ৫২) আউট করেন আফগান অধিনায়ক।
আজকের খেলা- পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা।