ভাইরাল ভিডিও নিয়ে মুখ খুললেন এমপি মোস্তাফিজ

105

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে গালাগাল করার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে- সেটা নিয়ে একুশে পত্রিকার কাছে নিজের বক্তব্য দিয়েছেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকসহ নানাজনের ফোন না ধরার কারণ ও কে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি প্রকাশ করেছে সেটাও একুশে পত্রিকাকে জানিয়েছেন তিনি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর একটি গাড়ির সামনের আসনে রয়েছেন। ভিডিওতে সাংসদের মাথা ও পিঠ দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ছোট করা হয়েছে দাবি করে ভিডিওতে এমপি মোস্তাফিজ চট্টগ্রামের ভাষায় বলছেন, আনোয়ারায় আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাবুর জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বাবু মিয়া না হলে শেখ রেহানা লন্ডনে বসবাস করতে পারতো না, শেখ হাসিনা রাজনীতি করতে পারতো না।
বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্য অপমানজনক দাবি করে মোস্তাফিজ আলাপচারিতায় উল্লেখ করেন, বিষয়টি সংসদে তিনি নেত্রীর কানে দিয়েছেন এবং নেত্রীকে নাকি বলেছেন আর একবার বললে আমি ওবায়দুল কাদেরের কলার ধরে ফেলব। নেত্রী এসময় তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলেন।
এ প্রসঙ্গে একুশে পত্রিকাকে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এগুলো অনেক আগের কথাবার্তা। এক বছর আগে হবে। আমি তো এসব কথা নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বলেছি। তবে ভিডিওতে কিছু এডিট, বিকৃত করা হয়েছে। কথাগুলোর মাঝখানে আরো কিছু কথা ছিল, পজেটিভ কথা। এডিট করে এসব কথা বাদ দেয়া হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘ভিডিও’র শেষের দিকে আমি কাদের ভাইকে গালি বেশী দিয়েছি- এমনটা দেখা গেলেও আদৌ তেমন গালি দিইনি। আমি বলেছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি। এটা তিনি পাবলিক মিটিংয়ে কেন বলবেন? এটা তো বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ছোট করা’। মোস্তাফিজুর বলেন, ‘আমি বাবু ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। বাবু ভাই সাহায্য করেছে, ঠিক আছে। একশ টাকা আয় করে ৫ টাকা দিয়েছে- এটা তো বাস্তবতা। এটা জনসম্মুখে বলা মানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ছোট করা হলো না? এটা তো ইন্টারনাল ব্যাপার’।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে একুশে পত্রিকার সাথেই প্রথমবারের মতো কথা বলছেন উল্লেখ করে সাংসদ মোস্তাফিজ বলেন, আমি তো অসুস্থ। আমি আর কারো সাথে ফোনে কথাও বলিনি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আমি ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আমার একটা অপারেশন হয়েছে। হাসপাতাল থেকে আজকে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অসুস্থ থাকার কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ও চলমান জাতীয় সংসদের অধিবেশনেও অংশ নিতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন সাংসদ মোস্তাফিজ। ভিডিওতে বক্তব্য নিয়ে কোনো চাপ বা কেউ ফোন করেছে কিনা- এমন প্রশ্নে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমি হাসপাতালে আছি তো। মোবাইল সবসময় সাইলেন্ট থাকতো। অপারেশনের সময় দুইদিন তো বন্ধই ছিল। সে সময় ভাইরাল হয়েছে।
এ নিয়ে দলের পক্ষ থেকে কেউ কিছু বলেছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, না, দলীয়ভাবে কি বলবে?
কে এই ভিডিওটি প্রকাশ করেছে বলে মনে করেন- এ প্রশ্নের জবাবে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, সাইফুদ্দিন রবি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদটি খালি ছিল। সে আমার সাথে সবসময় বাঁশখালী যাওয়া-আসা করতো। আগে তো কোনো সময় সুলতান কবির ভাইয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল না। মহিউদ্দিন চৌধুরীও তাকে কাছে রাখেনি। আমার সাথে যাওয়া-আসা করতে করতে আমাকে বলেছে, পদটা নেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। আমি ডিও লেটার দিয়ে নেত্রীর কাছ থেকে লিখিয়ে নিলাম। আমি ভিআইপি পাস দিয়ে নেত্রীর সামনে বসিয়ে রাখলাম। নেত্রী বললেন, উনাকে চিনেন। আমি বললাম, সাইফুদ্দিন রবি, চিনি তো। এই অবস্থা। নেত্রী বললেন, মোসলেমকে বলো। আমি বললাম, বললে হবে না, আপনি লিখে দিন। নেত্রী বললেন, তোমার সাথে থাকবে? আমি বললাম, থাকবে। নেত্রী বলেছেন, তাহলে তুমি ডিও লেটার দিও। এরপর আমি ডিও লেটার দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছি’।
বিষয়টি নিয়ে দলের দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ তার উপর রাগ করেন জানিয়ে সাংসদ মোস্তাফিজ বলেন, মোসলেম ভাই বলেছে, এটা আমরা ব্যাকডেটে পূরণ করে ফেলেছি। এখন (সাইফুদ্দিন রবি) আবার ধরেছে, আপনাকে আবার নেত্রীর কাছে যেতে হবে। আমি বলেছি, একবার এনে দিয়েছি, আর যেতে পারবো না। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমি তৃণমূল থেকে ভোট নিয়েছি। ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে তিনজনের নাম দিয়েছি। সেখানে সাইফুদ্দিন রবির নাম দেওয়া যায়নি। সেজন্য তিনি আমার উপর ক্ষুব্ধ। এই হলো সমস্যা।
তবে অসুস্থতার কারণে এ বিষয়ে সাইফুদ্দিন রবির সাথে কোনো ধরনের কথা হয়নি বলেও জানান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
এদিকে নিজের উঠে আসার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও একুশে পত্রিকাকে দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। সে সময় মোস্তাফিজের চাচা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা থাকার সুবাদে তাদের বাড়িতে যাওয়া-আসা ছিল আনোয়ারা-বাঁশখালী-কুতুবদিয়া আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতাউর রহমান খান কায়সারের। এমনকি আতাউর রহমান খান কায়সারের হাত ধরে মিছিল ও নির্বাচনী কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন বলেও জানান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
১৯৭২ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাঁশখালীর জলদি স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি হলে সেখানে সভাপতির দায়িত্ব পান মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। ১৯৭৩ সালে মেট্রিক পাশ করার পর সিটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল আবাসিক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
১৯৮১ সালে মাস্টার্স পাশ করার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, এখন উপজেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাঁশখালী থেকে টানা দুবারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য।