ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক ‘শিগগিরই’

21

 

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে ‘শিগগিরই’ উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের’ সঙ্গে বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর গতকাল সোমবার বলেন, এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে পরীক্ষা অনলাইনে হবে, নাকি সরাসরি হবে- তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। খবর বিডিনিউজের
সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সঙ্গে নিয়ে সমন্বতি পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, এবারও তারা আলাদভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। রাজশাহী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও সেই পথে হাঁটছে।
বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এবারও গুচ্ছ পদ্ধতিতে না এলে কী হবে, সেই প্রশ্নে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, এই পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় আগে থেকেই আলাদা ছিল, তাদের এক জায়গায় আনা যায়নি, তাদের মন এখনও গলেনি। তাদেরকে বাইরে রেখেই ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাকি ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে তিনটি গুচ্ছ করা হয়েছে। কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সাধারণ সায়েন্স ও টেকনোলজি নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। পরীক্ষাটা কীভাবে হবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত করা হবে।
অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এক প্রশ্নে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, এর আগে একটি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের পক্ষ থেকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার এটি সফটওয়্যার দেখানো হয়েছিল। একজন উপাচার্য যখন সফটওয়্যারটি দেখালেন, তখন কি অন্য কোনো উপাচার্য উনাকে বিব্রত করবেন? সবাই ভালোই বলেছেন। কিন্তু তারাই তো এর পক্ষে সিদ্ধান্ত দেননি, কারণ এটি নাকি এখনও পরীক্ষা করা হয়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় এটি পরীক্ষা করে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য রবিবার একটি চিঠি দিলেও সেই সভার তারিখ এখনও ঠিক হয়নি বলে জানান অধ্যাপক আলমগীর।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, আমরা আবারও সভায় বসব। ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি। মুনাজ আহমেদ (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর) যে সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছেন সেটি নিয়ে তিনি প্রেজেন্টেশন দেবেন। ভর্তি পরীক্ষা হবে, এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে অনলাইন নাকি অফলাইন।
কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতিতে না থাকার পেছনে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন অধ্যাপক রফিকুল।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। সেজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যারটি কাজে লাগাতে চাইছেন তারা।তবে ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে আদৌ সফলভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী ডিসেম্বের মাসের মধ্যে এইচএসসির ফল ঘোষণার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। তাদের সফটওয়্যারটি কতটুকু কার্যকর হবে তা যাচাইয়ের জন্যও খুব বেশি সময় হাতে নেই।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিভাগীয় শহরগুলোতে এবার তিনটি ক্লাস্টারে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে আভাস দেন ইউজিসির ওই কর্মকর্তা।
এবার জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন করা হবে। তাতে ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করবেন।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ হাজার আসনে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান উচ্চ মাধ্যমিক পার হওয়া শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়।
একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়।
শিক্ষার্থীদের এ দুর্ভোগ ও অভিভাবকদের ব্যয় লাঘবের জন্য গত কয়েক বছর ধরেই সমন্বিত একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপত্তিতে তা সম্ভব না হওয়ায় গতবছর ইউজিসি কেবল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেয়।