ভর্তির দাবিতে তালিকায় থাকা ‘অযোগ্যদের’ আন্দোলন

36

উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়নে উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ ভর্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহকারে আজ মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিতে বললে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সোমবার সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীন মিনার চত্বরে ভর্তির দাবিতে মানববন্ধনে অবস্থান নিয়েছেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘কাঁদতে আসিনি, যোগ্যতা নিয়ে ভর্তি হতে এসেছি’সহ বিভিন্ন স্লোগান লেখা পোস্টার প্রদর্শন করেন। এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একটি দল এসে তাদের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে যায় আলোচনার জন্য। পরে তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রক্টরের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপিটি ভর্তি কমিটিকে পাঠালে, প্রত্যেককে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম ও মানোন্নয়নের পর দুটি মার্কশিট, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও লিখিত আবেদন দিতে বলা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টার দিকে চলে যান।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মানোন্নয়নকৃত শিক্ষার্থীদের আবেদন যোগ্যতা নিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে অস্পষ্টতা ছিল। শিক্ষার্থীরা যোগ্য না হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন আবেদনে ১১ হাজার ৭৪১ জন মানোন্নয়নকৃত শিক্ষার্থীর আবেদন গ্রহণ করা হয়। এরপর তাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রবেশপত্রও সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার্থীরা এ অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়ার পর জানতে পারে তারা ভর্তি অযোগ্য। যদি ভর্তি অযোগ্যই হয়, তবে কেন তাদের পরীক্ষা অংশ নেওয়া বা মেধা তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে?
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন মিকাঈল আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘গতবার ভর্তির জন্য আবেদনের যোগ্যরা যে এবার মান উন্নয়নের ফল দিয়ে ভর্তির জন্য আবেদনের যোগ্য হবেন না। তা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়নি। এছাড়া আমাদের আবেদন গ্রহণ করার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি আমরা আবেদনের যোগ্য। ভর্তি পরীক্ষার প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা আগে আমাদের কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়েছে। তখনও এমন কোন নির্দেশনা ছিল না।’
আরেক শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন হৃদয় বলেন, ‘আমরা গত একটি বছর শুধু চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা অনেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করেছি। আর ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমরা অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেইনি। আমাদের শিক্ষা জীবন কি নষ্ট হয়ে যাবে? আমাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার আবেদন জানাই কর্তৃপক্ষের কাছে।’
বিশ^বিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক শাখা) ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব এসএম আকবর হোছাইন বলেন, ‘গত ৩ সেপ্টেম্বর ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের পর বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। আবেদনকারীদের অসচেতনতায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভায় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের একটি আবেদন পাঠালে আমরা প্রত্যেককে আলাদাভাবে আবেদন করতে বলেছি। মঙ্গলবার এ বিষয়ে কমিটির সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা কমিটির নীতিমালা আইসিটি সেলে আসে ৩ সেপ্টেম্বর। তখন ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরুর মাত্র পাঁচদিন বাকি। এত দ্রুত সফটওয়্যার ডেভেলপ করা সম্ভব না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের উপরে আবেদনকারীদের জন্য বলা হয়েছে, আবেদন করার পূর্বে লক্ষ্য করুন। এখন তারা বিষয়টি লক্ষ্য না করলে তাদের ভুল।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘ওরা আমার কাছে একটি দরখাস্ত দিয়েছে। তাদেরকে বলে দিয়েছি যে তারা প্রত্যেকে যেন মঙ্গলবার অফিস চলাকালীন তাদের দরখাস্তসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রক্টর অফিসে জমা দেয়, তা বলা হয়েছে।’ তবে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে ছাত্রসংগঠনের সমর্থন : এদিকে আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর তিন দফা বিশিষ্ট স্মারকলিপি দিয়েছেন শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। দাবিগুলো বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নিলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করারও হুশিয়ারী দেয় সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো- “ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ঘটে যাওয়া কারিগরি ত্রুটির কারণ অনুসন্ধানের জন্য দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন, ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শাটল ট্রেনে ফেরার সময় নিহত নির্মল দাশের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং ২০১৯-২০ সেশনে ভর্তির নীতিমালা অনুসারে উচ্চমাধ্যমিকে মানোন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিমালার বাইরে আবেদনের অযোগ্য হয়েও সিস্টেমের ফাঁক গলে যারা আবেদন করে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করা।”
যে কোন যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ পাশে থাকবে জানিয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো উপাচার্য মহোদয়ের কাছে জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে ডিন, ভর্তি কমিটি সমন¦য়দের সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্ত নিবেন।’