ভরা মৌসুমেও চালের দামের ঊর্ধ্বগতি

98

ধানের ভরা মৌসুমেও বেড়েছে চালের দাম। ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। দেশে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ার পরেও চালের দামের উর্ধ্বগতির কারণে নাখোশ সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক বছর আগের আমদানি করা চালও গুদামে মজুদ রয়েছে। আবার আমন মৌসুম এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। বছরের এ সময়টাতে চালের দাম কমতির দিকে থাকার কথা থাকলেও শুধুমাত্র সরকারিভাবে ৩৬ টাকা কেজিতে চাল সংগ্রহ করার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি চালের বাজার চাক্তাই ও পাহাড়তলীর ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে ১৫ দিন আগে স্বর্ণা সিদ্ধ জাতের চাল চিক্রি হয়েছে ৫০ কেজির বস্তা ১৫৫০ টাকায়। বর্তমানে দাম বেড়ে প্রতি বস্তা ১৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে কাটারিভোগ (আতপ) চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি ২৫ কেজির বস্তা ১৩০০ টাকায়। ১৫ দিন আগেও এ চালের দাম ছিল ১২০০ টাকা। ৫০ কেজির জিরাশাইল (সিদ্ধ) বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকায়। ১৫ দিন আগে এ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ২১৭৫ থেকে ২২০০ টাকায়। বাজারে স্বর্ণা পাইজাম (সিদ্ধ) ১৬৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫০ টাকায়। ২৫ কেজি বস্তার পাইজাম (আতপ) দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা করে। বর্তমানে ২৫ কেজি পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা। মিনিকেট জাতের চালের দামও ১০০ টাকা বেড়ে ১৯০০ থেকে ১৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেতি আতপ চালের দামও বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ১০-১৫ দিন আগে বেতি জাতের চাল বস্তা ১৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৬ লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করবে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রতি কেজি ৩৬ টাকায় এসব চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রথম ২৬ দিনে (২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪৭ টন চাল সংগ্রহ করেছে খাদ্য বিভাগ। এদিকে খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালের মজুদ রয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। এক বছর আগেও এই চালের মজুদ ছিল ৪ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।
অন্যদিকে দেশে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চালের উৎপাদন হলেও আমদানি থামেনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চলছে চাল আমদানি। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে ৪৯ হাজার ৩৪০ টন এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৫৭ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
হঠাৎ করে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাইয়ের পাইকারি আড়তদার মেসার্স এমজি ট্রেডিং এর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখন চালের ভরা মৌসুম। কিন্তু চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ৩৬ টাকা কেজিতে চাল সংগ্রহ করার কারণে বাজারে প্রভাব পড়েছে। ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তায় ২০০ টাকার মতো দাম বেড়েছে।’
পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি জাফর সওদাগর পূর্বদেশকে বলেন, ‘সরকারিভাবে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তার উপর নতুন করে আরো চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাছাড়া ওজন স্কেলের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে প্রতি ট্রাকে ১৩ টনের বেশি চাল চট্টগ্রামে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এতে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে বাজারে। আবার সরকারিভাবেও ৩৬ টাকা কেজিতে চাল সংগ্রহ করছে খাদ্য বিভাগ। এতে করে বাজারে চালের দাম বেড়েছে।’