বড় জয় নিয়ে যুক্তরাজ্যে আবারও ক্ষমতায় বরিস

23

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টি। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঘোষিত ৬৪৯টি আসনের ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ৩৬৪টি আসনে জয় পেয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ৪৭টি বেশি। আর প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি ৫৯টি আসন খুইয়ে পেয়েছে ২০৩টি আসন। ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৬৫০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে জয়ের জন্য বরিস জনসনের দলের অন্তত ৩২৬টি আসন প্রয়োজন ছিল। স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টোরি নেতা জনসনই ডাউনিং স্ট্রিটে থাকছেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী জনসন ভোটের এই ফলাফলকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের জন্য ‘নতুন শক্তিশালী ম্যান্ডেট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন ভোটের এই ফলকে ‘হতাশাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে জানিয়েছেন, আগামি নির্বাচনে তিনি আর পার্টির নেতৃত্বে থাকবেন না।
৬৪২টি আসনের ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, সব দলের ভোটের হার বাড়লেও সমর্থন খুইয়েছে কেবল লেবার পার্টি। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ভোট এবার গড়ে ১.২ শতাংশ বেড়েছে, অন্যদিকে লেবারের ভোট গড়ে ৭.৮ শতাংশ কমেছে। ব্রিটেনের তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের ভোটের হার সবচেয়ে বেশি ৪.২ শতাংশ বাড়লেও আসন কমে হয়েছে ১১টি। এ দলের নেতা জো সুইনসন নিজেই নির্বাচিত হতে পারেননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জয়ের ফলে পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করিয়ে নিতে সক্ষম হবেন বরিস জনসন। পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে সৃষ্ট যে অচলাবস্থার মধ্যে জনসনের প্রধানমন্ত্রিত্ব শুরু হয়েছিল, এবার তার অবসান ঘটবে। পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং এমপিদের বিরোধিতার কারণে এ পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারেনি কনজারভেটিভরা। এ অচলাবস্থা কাটাতেই প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে বরিস জনসনের নেতৃত্বে ব্রেক্সিট অথকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত উল্টে দেওয়ার মতো আরেকটি গণভোট- এই দুইয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে বৃহস্পতিবার পাঁচ বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সাধারণ নির্বাচনে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিল যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা। খবর বিডিনিউজের
রাতভর গণনা শেষে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে ১৯৮৭ সালের পর সবচেয়ে বড় জয়ের সুখবর এনে দিয়েছে শুক্রবারের ভোর। আর লেবার পার্টির জন্য এসেছে ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ ফল। বিবিসি লিখেছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় আসছে সোমবার সামান্য রদবদল আসতে পারে সরকারে। আর তারপর আগামি শুক্রবার পার্লামেন্টে এমপিদের সামনে তোলা হবে ব্রেক্সিট বিল। পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলে নির্ধারিত ৩১ জানুয়ারিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ ঘটবে।
এমপিদের বিরোধিতায় ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে না পেরে এ বছরই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়া টোরি নেতা টেরিজা মে নির্বাচনে জয়ের খবরে বলেছেন, পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় তিনি খুব খুশি। এই নির্বাচনে ব্রিটেনের মানুষের সামনে একটি প্রশ্ন ছিল- তারা ব্রেক্সিট চায় কিনা। তারা এটাও বুঝতে পেরেছে যে কনজারভেটিভ পার্টি জয়ী হলেই ব্রেক্সিট হবে। পার্লামেন্টে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল এই নির্বাচনের মাধ্যমে তা কেটে যাবে। ব্রেক্সিট হবে এবং এগিয়ে যাবে।
স্কটল্যান্ডে এবারের নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি)। ৫৯টি আসনের মধ্যে ৪৮ টিই জিতে নিয়েছে নিকোলা স্টারজিওনের দল, যা গতবারের চেয়ে ১৩টি বেশি। এবার ৪৫.১ শতাংশ ভোট পড়েছে এসএনপির পক্ষে, যা আগেরবারের চেয়ে ০.৮ শতাংশ বেশি। এসএনপি নেতা নিকোলা স্টারজিওন বলেছেন, ভোটের এই ফল স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের পক্ষে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।