ব্রেস্ট আয়রনিং : ব্রিটেনে বাড়ছে অমানবিক প্রথা

38

স্তন ইস্ত্রি করা। কথাটা শুনতে যেমনটা মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা ঠিক তাই। অল্প বয়স থেকে কোন মেয়ের স্তন গরম কিছু দিয়ে ইস্ত্রি করে দেয়া যাতে করে সেটি বড় না হয় এবং তার ওপর পুরুষের নজর না পড়ে। এই প্রথাটি এসেছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে। কিন্তু এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে ব্রিটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে। এ কারণেই ব্রিটেনের ‘ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়ন’ ব্রেস্ট আয়রনিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে স্কুল কারিকুলামে বিষয়টি বাধ্যতামুলকভাব অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছে। যাতে করে ছোট মেয়েদের এই নির্যাতন থেকে রক্ষা করা যায়। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। সেখানে ভুক্তভোগী ও এটা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। মেয়েটির পরিচয় গোপন রাখতে তাকে আমরা ‘কিনায়া’ নামে ডাকছি। কিনায়া ব্রিটেনে থাকে। তাদের পরিবারের পূর্বপুরুষরা এসেছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে।
‘ব্রেস্ট আয়রনিং’ এর প্রথাটা সেখান থেকেই আমদানি করা। মাত্র দশ বছর বয়সে কিনায়াকে এই যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়। কিনায়াকে তার মা বলেছিল, ‘যদি তুমি তোমার স্তন ইস্ত্রি না কর, পুরুষরা তোমার কাছে এসে তোমার সঙ্গে যৌনকাজ করতে চাইবে।’ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন মেয়ের মা নিজেই মূলত তার মেয়ের স্তন ইস্ত্রি করার কাজটি করতে উদ্যোগী হয়। সাধারণত একটি পাথর বা চামচ আগুনের শিখায় গরম করা হয়, এরপর এটি কোন মেয়ের বুকের ওপর চেপে ধরে বা ম্যাসাজ করে স্তন সমান করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়া চলে কয়েক মাস ধরে।

কিনায়া জানান, ‘ব্যাপারটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক এবং সময় যতই যাক, এই যন্ত্রণা ভোলার নয়। যখন এই কাজটি করা হয়, তখন আপনাকে কাঁদতেও দেয়া হবে না। যদি কেউ কাঁদে, সে নাকি তার পরিবারের জন্য লজ্জা নিয়ে আসছে।’ কিনায়া এখন বড় হয়েছে, তার নিজেরই রয়েছে কন্যা সন্তান। যখন তার প্রথম মেয়ের বয়স দশ পেরুলো, তখন কিনায়ার মা বললো, মেয়েটির ব্রেস্ট আয়রনিং করা দরকার। তখন এর প্রতিবাদ জানিয়ে কিনায়া বলেন, ‘না, না, আমি যে যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছি, আমার মেয়েদের বেলায় আমি তা হতে দেব না।’
কিনায়া এখন তার মা এবং পরিবারের কাছ থেকে আলাদা থাকেন, কারণ তার সন্দেহ, পরিবারের সঙ্গে থাকলে তার মেয়েদের ওপর ওরা হয়ত সেই কাজটি করার চেষ্টা করবে। ধারণা করা হয় ব্রিটেনে হয়ত প্রায় এক হাজার মেয়ে এরকম ঘটনার শিকার হয়েছে। ব্রিটেনে ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম) বা মেয়েদের যৌনাঙ্গ বিকৃত করার বিরুদ্ধে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু ব্রেস্ট আয়রনিং এর ব্যাপারে খুব কম লোক জানে।
বিবিসির ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানে একটি মেয়ে বলেন, প্রাইমারি স্কুলে ফিজিক্যাল এডুকেশনের ক্লাসে গিয়ে তিনি প্রথম বুঝতে পারেন যে তার শরীর অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা। তখন তিনি প্রথম বুঝতে পারেন যে ব্রেস্ট আয়রনিং ব্যাপারটা আসলে স্বাভাবিক নয়। এরপর মেয়েটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আট বছর ধরে মেয়েটির ব্রেস্ট আয়রন করেছিল তার বোন। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা বুঝতে পারেনি কিছু। মেয়েটি সবকিছুতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল, স্কুলের শারীরিক শিক্ষার ক্লাসেও যাচ্ছিল না। সে জানায়, ‘যদি আমার শিক্ষকরা জানতেন, যদি তাদের প্রশিক্ষণ থাকত, তারা হয়ত আমাকে সাহায্য করতে পারত যখন আমি এসবের ভেত