ব্যাংক খাতে হঠাৎ বেড়েছে আমানত

83

হঠাৎ করেই ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে এ খাতের সৃষ্ট তারল্য সংকটও কেটে যাচ্ছে। প্রতিমাসে ব্যাংকগুলো আমানত পাচ্ছে গড়ে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর গত তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) আমানত বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এ বছরের শুরুতেও ব্যাংক থেকে আমানত চলে যাচ্ছিল। কোনো কোনো ব্যাংক আমানতে সুদহার বাড়িয়েও সেভাবে আমানত বাড়াতে পারছিল না। আমানতের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছিল সঞ্চয়পত্রে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এক বছরে (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন) পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত বেড়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৯ মাসে বাড়ে ৬০ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। আর শেষ ৩ মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। অথচ এ বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ হাজার ১৭ কোটি টাকা। হঠাৎ আমানতের এ জোয়ারের জন্য সুদহার বৃদ্ধি ও সঞ্চয়পত্রে কড়াকড়ি আরোপকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো বেশ কিছুদিন ধরে আমানতে সুদ হার বাড়িয়েছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর প্রভাব কিছুটা পড়েছে আমানত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে’। তাঁর মতে, আমদানি ব্যয় কমে গেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদাও কমে গেছে। আবার ঋণ বিতরণ বাড়ছে না। যে কারণে হয়তো এখন ব্যাংকে আমানত বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, সঞ্চয়পত্র কেনায় কড়াকড়ি ছাড়াও ব্যাংকগুলো আমানতে আকর্ষণীয় সুদহার ঘোষণা করার পর ব্যাংকে নতুন আমানত আসছে। আমদানির জন্য ডলার কিনতে গিয়ে একটা বড় অংশ টাকা আটকা পড়েছিল। আমদানি ব্যয় কমা ও রফতানি আয় বেড়ে যাওয়াও আমানত বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তিনি। এই ব্যাংক কর্মকর্তার মতে, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সতর্কতাও আমানত বাড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরে (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন) ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শেষ ৩ মাসে বেড়েছে ৪০ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, হঠাৎ আমানত বাড়ার কারণে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। জুন পর্যন্ত এডিআর সীমার ওপরে রয়েছে ১৫টি ব্যাংক। ৩ মাস আগেও যা ১৯টি ব্যাংক সীমার ওপরে ছিল।
জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে কোনো কোনো ব্যাংক ১৪ শতাংশের বেশি সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহ করছে। অধিকাংশ ব্যাংক আমানত বাড়াতে অনেক কর্মকর্তাকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ৫ বছরে টাকা দ্বিগুণ করার আশ্বাসে আমানত সংগ্রহ করছে। যদিও বছরখানেক আগে আমানতে সুদহার ছিল ৮ থেকে ৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে আমানত বেশি বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। এসব ব্যাংকে শেষ ৩ মাসে (এপ্রিল-জুন) বেড়েছে ৪৬ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরে (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত) আমানত বেড়েছে ৯৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ২ ব্যাংকে বেড়েছে ১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৯ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এক বছরে (জুন পর্যন্ত) ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। একই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যাংকে মোট আমানত রয়েছে (জুন পর্যন্ত) ৭ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকে আমানত রয়েছে ৩ লাখ ৯৯৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকে রয়েছে ৩০ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকে আমানত রয়েছে ৫৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই অর্থবছরে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ টাকার বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া একই ব্যক্তির একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।