ব্যবহার ছাড়াই পরিত্যক্ত সন্দ্বীপের দুটি সি-অ্যাম্বুলেন্স

101

সন্দ্বীপের জরুরি রোগীদের চট্টগ্রামে পারাপারের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত সি-অ্যাম্বুলেন্স দুটি ব্যবহার করার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০০৮ সালে বরাদ্দকৃত ৩৫ লাখ টাকার অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার পর ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়। ত্রুটি সারাতে প্রয়োজনীয় প্রায় লক্ষাধিক টাকার অনুমোদন না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। দীর্ঘ ১০ বছর আগে পাওয়া এই সি-অ্যাম্বুলেন্সটি অনেকটা বিনা সার্ভিসেই গুপ্তছড়া বেড়ির স্লুইস গেটের পাশে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধা ছিল। অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও জরুরি মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি সম্বলিত সি-অ্যাম্বুলেন্সটি খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর শেষ পর্যন্ত এটি অকার্যকর হয়ে যায়।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চালক নিয়োগ না থাকায় ও জ্বালানি খরচের অনুমোদন না থাকায় সি-অ্যাম্বুলেন্সটি রোগী পারাপারে দ্বীপবাসীদের সেবা দিতে পারেনি।
অপরদিকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্ধকৃত প্রায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের অন্য সি-অ্যাম্বুলেন্সটিও অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হতে চলেছে। মানুষের আপদকালীন সময়ে জরুরি সার্ভিস দেওয়ার জন্য গত ২০১৫ সালে উপজেলা প্রশাসনের কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। উন্নতমানের এ সি-অ্যাম্বুলেন্সটি ঝুঁকিমুক্তভাবে জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য সক্ষমভাবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন এটি বুঝে পাওয়ার পর অদ্যাবধি সার্ভিসে যেতে পারেনি। ফলে তখন থেকেই এটি অব্যবহৃত অবস্থায় গুপ্তছড়া জেটি টার্মিনালের সন্নিকটে ডাঙ্গায় তুলে রাখা হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি আর ধুলাবালিতে অযত্নে পড়ে আছে এটি। না আছে এর রক্ষণাবেক্ষণ, না আছে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদার সাথে। তিনি বলেন, রোগী পারাপারের জন্য অ্যাম্বুলেন্সটি দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গিয়েছিল। চালক ও জ্বালানির অভাবে এটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না, সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট বিভাগে অবহিত করা হয়েছে।
চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত সন্দ্বীপের জরুরি রোগীদের ঝুঁকিপূর্ণ সাগর পারাপারে করুণ অবস্থা সবারই জানা। যুগ যুগ ধরে জরুরি প্রসূতি মায়েদের বাধ্য হয়ে স্যালাইন সংযোগ দিয়ে ফিটনেসবিহীন নৌযানে পারাপার করতে হচ্ছে। চিকিৎসা সাপোর্টের অভাবে নৌযানে তাদের করুণ মৃত্যু কিংবা উন্মুক্ত সন্তান প্রসবের অনেক ঘটনাও রয়েছে। এত দুর্ভোগের পরও সরকারিভাবে প্রদত্ত দুটি সী অ্যাম্বুলেন্স একদিনের জন্যও দ্বীপের রোগীদের কাজে আসেনি। ভুক্তভোগী রোগীর আত্মীয়স্বজনরা জানান, তারা জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ফেরি অফ-টাইমে স্পিডবোট কিংবা যন্ত্রচালিত ছোট নৌকায় (লাল বোট) ৫/১০ হাজার টাকা ভাড়া করে রোগীদের (ডেলিভারি কিংবা গুরুতর আহত) চট্টগ্রাম নিয়ে যেতে হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ফজলুল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সন্দ্বীপের জরুরি রোগীদের প্রয়োজনে সি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় চালক নিয়োগ ও জ্বালানি খরচ অনুমোদনের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।