বোয়ালখালীতে স্কুল পর্যায়ে শহীদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি

140

পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মায়ের ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করেছিলো এ দেশের ছাত্র জনতা। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর শহীদদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানাতে স্কুল পর্যায়ে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিলো চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। ১৯৬৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম নির্মিত হয় শহীদ মিনার। স্কুল পর্যায়ের প্রথম এ শহীদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে বাংলা একাডেমিতে আবেদন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেইদিন রাতে যাদের দুর্দান্ত সাহসে নির্মিত হয়েছিল এ শহীদ মিনার। সে সময় যারা উপস্থিত ছিলেন মরহুম আবুল হাসান, সৈয়দ নুরুল হুদা মাহবুব উল আলম, ফরিদ উদ্দিন জালাল, পিযুষ চৌধুরী, মিলন নাথ, যোগব্রত বিশ্বাস, আবদুছ সত্তার, দুলাল মজুমদার, মোহাম্মদ আলী, আবুল কালাম আজাদ, ওসমান, এস এম ইউছুফ, তসলিম উদ্দিন, জাকির হোসেনসহ আরও কয়েকজন এলাকাবাসী। তাদের অনেকেই এখন বেঁচে নেই। তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিকা রেখেছিলেন ষাট দশকের উপজেলার ছাত্র ইউনিয়নের নেতা বর্তমান জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সৈয়দুল আলম। তিনি বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আমরা যখন স্কুল আঙিনায় শহীদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা নিই, তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকেরা তাতে বাঁধা দেন। তাদের আশঙ্কা ছিল এর ফলে স্কুলের অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু অদম্য ছাত্ররা বিদ্যালয়ের আঙিনায় ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করেন শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রæয়ারি সকালে কাননুগোপাড়া স্যার আশুতোষ কলেজসহ বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিলসহ নবনির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে দেশের কোনো স্কুলে এমন শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। জানা যায়, শহীদ মিনার তৈরির অপরাধে তৎকালীন তরুণ ছাত্র নেতা সৈয়দ নুরুল হুদা ও সৈয়দ আবুল হাসানকে সেদিন কধুরখীল বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। এছাড়া এ বছর স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষার বরাদ্দও বাতিল করা হয়। ১৯৭২ সালে ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পিরামিডের মতো শহীদ মিনারটি ভেঙে পুন:নির্মাণ করা হয়। অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত একুশের বই মেলার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত একুশের স্মারক গ্রন্থ’-এর ৮৯৭ পৃষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন গবেষক এম এ বার্নিকের লেখা জেলায় জেলায় শহীদ মিনার’ প্রবন্ধেও এ তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া জানান, দেশের স্কুল পর্যায়ের প্রথম শহীদ মিনার এটি। এর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে গত ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমির কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।