বোকা

21

স্বদেশ দত্ত

বসে আছি জারুল গাছের তলে। ইচ্ছা করেই ক্লাসে যাই নাই। তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। সেখানে কালো মেঘ জমেছে। পাশেই প্যাজি তুলার মতন সাদা মেঘ। এই সাদা মেঘ কি কালো মেঘকে সরিয়ে দিতে পারবে ?
পিছন থেকে কেউ একজন চোখ চেপে ধরেছে। ছোট বেলায় এই ক্ষেত্রে কৌতুহল জাগত কে ধরল ? এখন বিরক্তি জাগে। বিশেষ করে যখন মনে কালো মেঘ ভর করে।
আমি এক ঝটকায় চোখ থেকে সরিয়ে দিলাম। অভিলাস হাসছে।
ক্লাস ফেলে সে এখানে কেন ? আমার চোখে উপেক্ষা ও প্রশ্ন।
অভিলাস উপেক্ষাকে গায়ে মাখে নাই। সে আগের হাসিকে ধরে রেখে বলতে থাকে জানিস ? অনেক খারপের মধ্যে একটি ভালো খবর আছে।
সে আমার কোন প্রশ্ন বা উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে যায় সবচেয়ে কম মদ খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় আছে বাংলাদেশ।
আমি গলায় ঝাঁঝ মিশিয়ে বললাম Ñ এই কথা বলার জন্য তুই এখানে এসেছিস ?
– না। তবে মদ ব্যাপারটা আছে।
আমি অভিলাষের দিকে তাকিয়ে আছি। আর সে বলে যাচ্ছে Ñ মদ খেলে নানান রকম সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু দুই ক্ষেত্রে ভালো দিক আছে। ঠিক, মনে করতে পারছি না। তিথির থেকে আবার জিজ্ঞেস করতে হবে।
তিথি নামটা শুনার সাথে সাথে মাথার মধ্যে আগুন জ¦লে উঠল। ক্ষুব্দ কণ্ঠে বললাম Ñ লুইচ্চা। এই নাম আর উচ্চারণ করবি না। আরেকবার উচ্চারণ করলে খুন করে ফেলব।
অভিলাষ বুক পকেট থেকে একটা নীল খাম সামনে রেখে উঠে দাঁড়াল।
এটা তোকে তিথি দিয়েছে। তোকে খুনি বানাবার ইচ্ছা নেই – বলতে বলতে সে ফ্যাকাল্টির দিকে দৌঁড় দিয়েছে।
খামটা ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হলো। হাতে নিয়ে মুচড়িয়ে ফেললাম। পর মুহূর্তে মনেহলো – দেখি, ভিতরে কী আছে?
মোচড়ানো খামটাকে সোজা করলাম। ভিতরের লেখাটি বের করলাম। ছোট্ট একটা লেখা। নিমিষেই পড়ে ফেললাম।
বোকারহদ্দ,
শুনেছি, তুমি নাকি মদ খাচ্ছ ? তোমার কি ডায়বেটিস বা হৃদরোগ হয়েছে ? এই দুই ক্ষেত্রে মদ না কি সামান্য সুরক্ষা দেয়। সব ভুয়া। হাজারো নেগেটিভের মধ্যে দুই একটা পজিটিভ খোঁজা।
আমি হৃদরোগ বা ডায়বেটিস ধারী কোন ছেলেকে নিয়ে ভাবতে পারব না।
মনের মধ্যে একটা ঘন্টা ঘট করে বেজে উঠল। ঘন্টা বাজলে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। যার ফলাফল প্রতিফলন-ব্যতি চার নানামুখী প্রতিক্রিয়া। মনঘন্টা তাই সৃষ্টি করল।
মদ খাই ? অভিলাষ বলেছে ? দিয়ে ছিলাম ছোট একটা চিরকুট। ‘ভালোবাসি। ভেবে দেখো।’ এই ভেবে দেখা ? আগে তো কখনও অভিলাষের সাথে এমন জমানো ভাব দেখি নাই। চিরকুটের পর থেকে ট্রেনে আসতে-যেতে অভিলাষকে ডাকছ। যাচ্ছ ঝুপড়িতে। চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়াচ্ছ। আমাকে দেখেও না দেখার ভান ?
আমাকে নিয়ে তুমি কোন কালে ভেবেছ ? এখন যখন মদ ধরেছি, তখন দরদ উথলে উঠল ? আর এটাকে মদ বলছি কেন ? আলু থেকে নিজে তৈরি করি। স্পিরিট এর উল্টা। আর ডায়বেটিস ? হৃদরোগ ? এইসব অভিলাসের হতে পারে। তার মতো বাবু হয়ে বসে থাকা ছেলে নই। এনায়েত বাজারের মোড় থেকে স্টেশনে যাওয়া আসা। আসকার দিঘিরও দিকে হেঁটে পড়াতে যাই। ফাস্ট ফুড খাই না। তিনবেলা ভাত। এখনও বাড়িতে গেলে বাবার সাথে মাঠে যাই।
নানামুখী ভাবনার মধ্যেই ব্যাগে হাত রেখেছি। যেখানে ক্যান ভর্তি ৪.৬% ইথানল আছে।
ক্যানের ঢাকনা খুলে চুমুক দিতে যাব, এমন সময় হাতে টান। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি তিথি।
এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নিই।
তিথি হেসে বলে – যতই তুমি হাত ছাড়িয়ে নাও, আমি কিন্তু ছাড়ছি না।
সে টেনে নেয় আমার হাত। তারপর বলতে থাকে -জান তো, তির্যক নাট্য গোষ্ঠিতে যোগ দিয়েছি। দেখলাম অভিনয়টা জমাতে পারি কিনা ?
অদূরে অভিলাষ খিল খিল করে হাসতে থাকে।
এমন সময় অন্যের কেমন লাগত জানি না। আমার কিন্তু, নিজেকে বোকা বোকা লাগছে।