বোকা ভূতের কান্ড

251

গ্রামের শেষ প্রান্তে একটি টিনের ঘর আছে। সে বাড়ির বড় ছেলেটি ছিল যেমন দুরন্ত তেমনি মেধাবী। সারাদিন পাড়াময় টো টো করে ঘুরে বেড়ানো। ছেলেটি লেখাপড়ায়ও ছিল খুব মেধাবী। একটি পড়া একবার পড়লে দ্বিতীয় বার পড়তে হয় না, একেবারেই মুখস্থ করে ফেলে। এমন দুরন্ত মেধাবী ছেলে গ্রামে দ্বিতীয়টি দেখা যায় না। একবার দেশে প্রচন্ড বর্ষা হলো। বিলে ম্যালা মাছ। সবাই জাল নিয়ে ছুটছে দেখে ছেলেটিও জাল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। ঠিক সন্ধ্যার আগে সে যতবার জাল ফেলে ততবারই জাল ফেলার আগে পানিতে ঝুপঝাপ শব্দ শোনা যায়। তখন ছেলেটির বুঝতে অসুবিধা হয়নি। সে নিশ্চিত কোন শয়তান মেছো ভূতের পাল্টায় পড়েছে। বুঝতে পেরে দোয়া-দরুদ পড়ে গায়ে ফুঁ দেয়। আর বলে শয়তান ভূত কত জ্বালাবি তুই। তোর মতো দু’চারটে ভূত আমার পকেটে থাকে। একথা বলে আবার জাল ফেললো। এবার একটা বোয়াল জালে আটকা পড়েছে দেখে ছেলেটি আর দেরি করে না। সাবধানে জাল তুলে বোয়ালটি জালে পেঁচিয়ে কাঁধে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় বাড়ির কাছে পৌঁছেও যায়। বাড়ির কাছাকাছি এসে পুকুর পাড়ের বড় তালগাছের নিচে সাদা জোব্বা গায়ে লম্বা একটি মানুষ দেখে ছেলেটি চমকে ওঠে। দোয়া পড়ে আবার গায়ে ঝাঁড় ফুঁক দিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে। এই সময় জোব্বাধারী লোকটি পথের দু’পাশে দুই পা রেখে হাঁক দেয়।
এ ছেলে তুই আমার দু’পায়ের মাঝখান দিয়ে হেঁটে যা বলছি।
ছেলেটি বলল আমি এত বোকা ছেলে নই যে, তোর দুই পায়ের মাঝখানে দিয়ে যাবো। ঐ পথে গেলে তুই আমাকে তোর দু’পায়ের ফাঁকে চেপে মেরে ফেলবি।
তখন ভূত রেগে গেলো, তুই দেখছি ভারি বজ্জাত ছেলে।
এই রকম বেশ কয়েকবার বলেও ভূত ছেলেটিকে কাবু করতে পারে না। শেষে আপসের সুরে বলে ঠিক আছে তুই যেতে না চাস যাস না। তবে তোর জালে আটকা পড়া মাছটি রেখে গেলে তোকে ছেড়ে দিতে পারি।
শুনে ছেলেটি রেগে যায়। হুংকার দিয়ে বলে, আরে তুই তো আমার কাছে সামান্য ভূত । তোর মতো ভূত আমি সব সময় পকেটে রাখি। এই বলে ছেলেটি পকেট থেকে ছোট একটি আয়না বের করে ভূতটির সামনে ধরে। ভূত আয়নায় তার মতো আরেকটি ভূত দেখেই হাউ মাউ করে ভয়ে পালাতে থাকে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে এক সময় ভূত তাদের সর্দারের সামনে পড়ে যায়।
কি হে বেটা দৌঁড়াচ্ছিস কেন?
তখন ঐ ভূত কাঁদতে কাঁদতে বলে, সর্দার দেখলাম ঐ বিলে একটি ছেলে বড় বোয়াল মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরছে। তাকে ভয় দেখিয়ে মাছটি খেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেটির যেমন বুদ্ধি তেমন সাহস। আমাকে একটুও ভয় পেল না। উল্টো তার পকেট থেকে ভূত বের করে আমাকে দেখায়। দেখে আমি ভয়ে পালিয়ে এলাম।
সর্দার বলে, থাম বেটা, সব বুজুরকি। আমাকে নিয়ে চল, আমাকে ভয় পাবে না, এমন ছেলে এই গাঁয়ে আজো জন্ম হয়নি। এই কথা বলে দুই ভূত আবারও রওয়ানা দিলো। ছেলেটির কাছে গেলে সর্দার ভূত বলে এই ছেলে ভাল চাস তো মাছটি রেখে সোজা বাড়িতে চলে যা।
ছেলেটি এক নজর সর্দার ভূতকে দেখে বলে, তুই আবার কেরে? মাছ ধরেছি আমি, আর রেখে যাব তোর জন্য।
(২)
আমি এই এলাকার ভূত সর্দার! ভালোয়-ভালোয় বলছি মাছ রেখে যা।
ছেলেটি বললো, বললে হলো। মাছ রেখে যাব তোর জন্য। আর আমি খালি জাল হাতে বাড়ি ফিরবো। আমি তোর মামা না তালুই?
আমি এলাকার ভূত সর্দার। নাম শুনলে এলাকার সবাই এক ঘাটে পানি খায়। আর তুই সামান্য একটি ছেলে হয়ে আমার সঙ্গে মশকরা করিস ?
বাড়াবাড়ি করেছি তো বেশ করেছি, তুই তো ভূতের সর্দার, তোর বাহাদুরি ভূতের সঙ্গে আমার কাছে কি?
আমরা তোর মাছ খাব। মাছ খাবি তো ধরে নিয়ে খা, আমি চললাম।
ভূত বললো আমি তোর মাছটি খাব।
ছেলেটি ভাবল এ দেখি নাছোড়বান্দা ভূত! তাকে আজ এমন শিক্ষা দেব, জন্মেও কারো মাছের প্রতি লোভ করতে পারবে না। ছেলেটিকে চুপচাপ দেখে ভূতটি বলে,
কি ভাবছিস? অতো ভাবার কি আছে? মাছটি রেখে গেলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
ঠিক আছে আমি মাছটি রেখে যাব এক শর্তে। তোদের দুইজনকে কথা দিতে হবে, শক্তি দিয়ে যদি মাছটি ছিনিয়ে নিতে পারিস তাহলে মাছটি তোদের। এই শর্তে ভূতেরা রাজি হলো।
শুরু হলো ধস্তাধস্তি। ভূতেরা প্রচন্ড শক্তি দিয়ে ছেলেটিকে ছাতু বানিয়ে দিতে চায়। অন্যদিকে গায়ে গতরে ছোট পুচকে ছেলেটি বুদ্ধির জোরে ভূতদের হারিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । ভূতেরা বিশাল থাবা বাড়িয়ে ছেলেটিকে ধরতে গেলে সে বাইন মাছের মতো পিছলে যায়। সুযোগ পেলেই ভূতের পেটে হাঁটুর নিচে কাতুকুতু দেয়। হাসির গমকে ভূতেরা পিছু হটে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ লড়াই চলার পর ছেলেটি রাস্তার পাশ থেকে বেশ কয়েকটি বিছুটি পাতা ছিঁড়ে নিয়ে দুই ভূতের গায়ে আচ্ছামতো লেপ্টে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দুই ভূতের চুলকানির প্রতিযোগিতা। চুলকাতে চুলকাতে তারা লড়াইর কথা ভুলে পালিয়ে যায় আর ছেলেটি মাছ নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা দেয়। কিছু দূর যাওয়ার পর আবার ভূত সর্দার হাজির হলো ছেলেটির সামনে কুকুরের ছদ্মবেশে। ভূতের চালাকি ছেলেটির বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তাই সাহসের সঙ্গে বুদ্ধির জোরে কুকুরটিকে বলে এই ছদ্মবেশী ভূত আবার এসেছিস? বলে পকেটের আয়নাটি বের করে কুকুরের সামনে ধরলে কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করতে করতে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যায়। ছেলেটি সকল বিপদ জয় করে মাছ নিয়ে বাড়ি পৌঁছে যায়। একমাত্র সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধির জোরে ছেলেটি বোয়াল মাছটি নিয়ে বাড়ি পৌঁছে যায়।