বোকা ঈগল ও পেটুক বিড়াল

206

একদা এক বনের সব থেকে উঁচু একটি দেবদারু গাছে এক জোড়া ঈগল পাখি এসে বাসা বেঁধে বসবাস করতে থাকে। বেশ কিছুদিন পর স্ত্রী ঈগল পাখিটা তিনটি ছানার জন্ম দিলো। এই কারণে ঈগল পাখি দুটি সারাদিন বনে ঘুরে ঘুরে ছোট ছোট পাখি, খরগোশ, ইঁদুর ধরে বাসায় নিয়ে আসে তাদের ছানাদের খাওয়ানোর জন্য। বেশ কিছুদিন পর একদিন সকালে স্ত্রী ঈগলটা শিকারের খোঁজ করতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে পুরুষ ঈগলটাও শিকারের উদ্দেশ্যে বের হবে, এমন সময় সে লক্ষ্য করলো তাদের বাসার দেবদারু গাছের নিচের ঝোপের ভিতর কি যেন একটা নড়াচড়া করছে। তাই দেখে পুরুষ ঈগলটা বাসা থেকে নিচে নেমে ঝোপের ভেতর কি আছে তা দেখতে এলো।
দেখলো, ঝোপের ভেতর সাদা রঙের একটা বিড়াল বসে রয়েছে। ঈগলটা তো মহা খুশি, সে মনে মনে বলল, বাহ্ এতদিন সারা বন ঘুরে ঘুরে শিকার খুঁজে পাইনা! আর আজ আমার বাসার নিচেই শিকার এসে হাজির। হা হা হা…। আজকের দিনটা আমার জন্য অনেক শুভ মনে হচ্ছে। এই বলে ঈগলটা বিড়ালটাকে তার দুই পা এর নখ দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে উড়াল দিয়ে বাসায় নিয়ে গেলো তার ছানাদের খাওয়ানোর জন্য।
ঈগলটা বিড়ালটাকে বাসায় নিয়ে আসার পর বিড়ালটা মিঁউ মিঁউ শব্দ করে ডাকতে লাগলো। আর বিড়ালের এই ডাক শুনে ঈগল পাখির ছানা গুলো প্রচÐরকম ভয় পেয়ে গেলো। কিন্তু ঈগলটা সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে বিড়াল টাকে জ্যান্ত বাসায় রেখে দিয়েই স্ত্রী ঈগল পাখিটার খোঁজ করতে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। কিন্তু পুরুষ ঈগলটার জানা ছিলো না যে, বিড়ালটা কত বড় পেটুক ও দুষ্টু। যেই পুরুষ ঈগলটা বাসা থেকে বের হয়েছে, ঠিক এমন সময় বিড়ালটা সুযোগ পেয়ে টপাটপ করে ঈগল পাখির তিনটা ছানাকেই খেয়ে ফেলল।
আর এদিকে বিড়ালটা ছিলো গাছে চড়তে বেশ পটু। সে প্রায়ই বনের উঁচু উঁচু গাছে চড়ে অন্যান্য পাখির বাসা থেকে বাচ্চা চুরি করে খেয়ে অনায়াসে গাছ থেকে নেমে আসতে পারে।
যার জন্য বিড়ালটা এবারও ঈগল পাখির ছানাগুলোকে খেয়ে অনায়াসে গাছ থেকে নিচে নেমে এলো।এমন সময় পুরুষ ও স্ত্রী ঈগল পাখি একসাথে বাসায় ফিরে দেখে, তাদের বাসায় একটা ছানাও নেই। তাই দেখে স্ত্রী ঈগলটা কান্না করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর পুরুষ ঈগলটা বুঝতে পারে এটা নিশ্চই ঐ দুষ্টু বিড়ালটারই কাÐ! এই বলে ঈগলটা এদিক ওদিক তাকি তুকি করতে লাগলো। এমন সময় সে দেখতে পেলো, দুষ্টু বিড়ালটা পেটপুরে বাচ্চাগুলো খেয়ে পিঠ বেঁকিয়ে দুলে দুলে বনের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে। ঈগলটা তা দেখতে পেয়ে অতি দ্রæত উড়াল দিয়ে যায় বিড়ালটাকে ধরে চরম শিক্ষা দেবার জন্য। কিন্তু দুষ্টু বিড়ালটা ঈগলটাকে তেড়ে আসতে দেখে প্রচÐ জোরে দৌড়ে একটা গর্তের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে পড়ে। ঈগলটা বহু চেষ্টা করেও গর্তের ভেতর যেতে না পেরে গর্তের বাইরে থেকেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে লাগে। কিন্তু দুষ্টু বিড়ালটা তখন আর গর্তের বাইরে বের হলো না।
আর এদিকে পুরুষ ঈগলটা অপেক্ষা করতে করতে ধৈর্য্যহারা হয়ে নিজের বাসায় ফিরে গেলো এবং বাসায় গিয়ে তার ছানাগুলো হারানোর শোকে চিৎকার করে আকাশ পাতাল এক করতে লাগলো। আর সেই সুযোগে বিড়ালটাও গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে বন ছেড়ে অনেক দূরে পালিয়ে গেলো।