বৈধ গ্রাহক প্রতিনিধি নেই চট্টগ্রাম ওয়াসায়

57

গ্রাহকদের স্বার্থ দেখার জন্য একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডে। কিন্তু এ গ্রাহক প্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হয়েছে বিগত চার বছর আগেই। নতুন বোর্ড সদস্য নিয়োগ না হওয়ার সুযোগে এখনো প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনি। দীর্ঘদিন আগে মেয়াদ শেষ হওয়া এ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে একের পর গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ উঠছে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন করা হয় ২০১২ সালে। একজন চেয়ারম্যান ও ১২জন সদস্য নিয়ে এ বোর্ড গঠন করা হয়। ১২ সদস্যের মধ্যে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদাধিকার বলে এবং বাকি ১১ সদস্য বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করছেন। এরমধ্যে পানি ব্যবহারকারীগণের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন মো. সোলায়মান আলম শেঠ। ২০১২ সালে সোলায়মান আলম শেঠকে ওয়াসা বোর্ডে নিয়োগ দেওয়া হয় তিনবছরের জন্য। সে হিসেবে ২০১৫ সালেই শেষ হয়ে যায় তার মেয়াদ। এতে ২০১৫ সালে ওয়াসার পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গ্রাহকদের প্রতিনিধি মনোনীত করার জন্য পত্র লিখে ওয়াসা। সে পত্রে তিনজন গ্রাহকের নাম প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবিত এ তিন গ্রাহকের মধ্যেও রাখা হয় সোলায়মান আলম শেঠকে। বাকি দুইজন হলেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আস্থাভাজন ও চায়না পেট্রোলিয়াম ব্যুরোর লোকাল এজেন্ট প্রকৌশলী রাজীব বড়ুয়া ও নবাব সিরাজউদদোল্লা রোডের জনৈক সিরাজুল ইসলাম। ২০১৫ সালে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে গ্রাহকদের প্রতিনিধি মনোনিত করে কোনো পত্র আসেনি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওয়াসায় টানা সাতবছর বোর্ড সদস্য হিসেবে আছেন সোলায়মান আলম শেঠ। ওয়াসার গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে নিয়মিত নানান সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।
জানতে চাইলে সোলামমান আলম শেঠ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে বাদ দেয়া হয়নি। আমাকে দায়িত্ব থেকে বাদ দেয়া হলে আমি থাকবো না। এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। যারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন তারা ধান্ধাবাজ। বাজে লোকজন এসব কথা বলে। তারা কেমন লোক সেটা সবাই জানে।
গ্রাহকের প্রতিনিধি হয়ে গ্রাহক স্বার্থ বিরোধী আচরণ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যারা এসব কথা বলে তারা অযোগ্য লোক। একটা চেয়ারে বসে এমডিকে হেয় করা এটা বাজে লোকের কাজ। যারা অযোগ্য তারা এসব করতে পারে। ধান্ধাবাজির জন্য এসব করে তারা। তাদের রক্তে, বংশে সমস্যা। সরকার রক্ত দেখে, বংশ দেখে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসা পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজন করে এক গ্রাহক সমাবেশের। ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজন করা এ গ্রাহক সমাবেশে ছিলো মাত্র কয়েকজন গ্রাহক। গ্রাহকদের না ডেকেই এমন সমাবেশ আয়োজন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ওয়াসাকে। সে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন না গ্রাহকের প্রতিনিধিত্বকারী বোর্ড সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। পরবর্তীতে বোর্ড সভায় গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েন সোলায়মান আলম শেঠ। বিভিন্ন স্তর থেকে গ্রাহক প্রতিনিধি পরিবর্তনের দাবি উঠে।
প্রসঙ্গক্রমে জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, বোর্ড সদস্য মনোনীত করে মন্ত্রণালয়। আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে আমরা তিনজনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। সেখান থেকে একজনকে মন্ত্রণালয় মনোনীত করে। কোনো কারণে আমাদের পাঠানো নাম পছন্দ না হলে আবার নাম চাইতে পারে। সে অনুযায়ী আমরা নাম পাঠানোর নিয়ম। সে অনুযায়ী সোলায়মান আলম শেঠের মেয়াদ শেষ হলে আমরা আবার তিনজনের নাম প্রস্তাব করে পাঠাই। কিন্তু এরপর থেকে মন্ত্রণালয় থেকে আর কোনো নির্দেশনা আসেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন মন্ত্রণালয় কাউকে মনোনীত বা নিয়োগ না দেয় ততক্ষণ পূর্ববর্তী ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করার নিয়ম। সে হিসেবে সোলায়মান আলম শেঠ দায়িত্ব পালন করছেন। মন্ত্রণালয় থেকে যদি কোনো দিক নির্দেশনা দেয়া না হয় তাহলে আমাদের করার কিছুই থাকে না। এটি নির্ভর করে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর।
ওয়াসার গ্রাহক প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পদ্ধতি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু আইনে উল্লেখ না থাকায় ওয়াসার পক্ষ থেকে পছন্দের ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকেই মনোনীত হচ্ছে গ্রাহক প্রতিনিধি। এতে করে প্রকৃত গ্রাহকরা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার যে গ্রাহক প্রতিনিধি প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি গ্রাহকদের স্বার্থের কথা চিন্তা করছেন না। এ নিয়ে সম্প্রতি কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপিও দিয়েছে।
এ বিষয়ে ক্যাব কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ওয়াসার বর্তমান গ্রাহক প্রতিনিধির কোনো বৈধতা নেই। তার মেয়াদ শেষ হয়েছে চার বছর আগে। তবু তিনি গ্রাহক প্রতিনিধি হিসেবে ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ সভায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ওই গ্রাহক প্রতিনিধি গ্রাহকের মধ্য থেকে নির্বাচিত নয়। তাই বিভিন্ন সভায় তিনি গ্রাহকদের স্বার্থ বিরোধী কথা বলেন নিয়োগকর্তাকে খুশি রাখার জন্য। এসব বিষয় উল্লেখ করে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা বলেছি ওয়াসার প্রকৃত গ্রাহকদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা হোক। পাশাপাশি এও বলেছি ক্যাব যেহেতু ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে এসব ভোক্তা সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেনো ক্যাবের প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়।