বৈদ্যুতিক কারণে আগুন করণীয় ঠিক করতে হবে

128

চট্টগ্রাম নগরীর নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তশ্রেণির প্রধান কাপড়ের মার্কেট জহুর হকার মার্কেটে আগুন লেগে শতাধিক দোকান ও গুদাম পুড়ে ছায় হয়েছে। প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। দোকানহারা পুঁজিহারা শতাধিক ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এ মার্কেটে আগুনলাগা একসময় নিত্য ঘটনা হলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ বেশ কয়েকবছর ধরে আগুন লাগার খবর আমরা পাইনি। কিন্তু গত শনিবার ভোর রাতে জহুর হকার্স মার্কেট লাগোয়া জালালাবাদ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক তারের ত্রুটি থেকে আগুন লাগলে অতি স্বল্পসময়ে তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের জহুর মার্কেটেও বিস্তার লাভ করে। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা এবং অপ্রশস্ত সড়কের কারণে জালালাবাদ মার্কেট ও জহুর হকার মার্কেটে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। একই আশঙ্কা দুই মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতা ও সাধারণ ব্যবসায়ীদেরও। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগরীর পরীর পাহাড়ের পশ্চিম পাশে আদালত ভবনের সীমানা দেয়াল ঘেঁষে টিনশেড, আধাপাকা জালালাবাদ মার্কেট। এর সাথে লাগানো জহুর হকার্স মার্কেট। দুই মার্কেটের মাঝে শুধু একটি সীমানা দেয়াল রয়েছে। এখানে আধাপাকা কাঠামোর ওপর দুইতলা গুদাম, ওপরের অংশ টিনের ছাউনি দিয়ে রাখা হয়েছে। অগ্নিকান্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের ১৯টি গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ১৯টি গাড়িতে থাকা পানি ব্যবহারের পর শেষ হয়ে গেলে সংলগ্ন দুটি মসজিদের ট্যাংক এবং সবশেষে লালদীঘি থেকে পানি এনে আগুন নেভানো হয়। আগুন নেভাতে গিয়ে দুজন ফায়ার ম্যান সামান্য আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। একইদিনে নগরীর ডবলমুরিং থানার মোল্লাপাড়ার এক বাড়িতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে লাগা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন এক শিশু। আহত হয়েছেন বাবা-মা। জহুর হকার্স মার্কেটের ঘটনার চেয়ে বরং কম নয় মোল্লাপাড়ার এ আগুন। কারণ এতে একজন নিস্পাপ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। এর আগে নগরীর চাকতাই এলাকায় পরপর কয়েকবার আগুন লেগে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা লক্ষ করে আসছি, নগরীর অধিকাংশ আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রæটি থেকে। কিন্তু এ ত্রæটি সরানোর কোন উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে আর কোন ফলোআপ থাকেনা। ফলে বৈদ্যুতিক ত্রুটিও কমছেনা, আগুনও কমছেনা। এ অবস্থার দ্রুত অবসান প্রয়োজন। এ জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে সতর্ক হতে হবে। আমরা মনে করি, ভবনে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং মানুষ ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজন কার্যকর ফায়ার ডিটেকশন ও প্রোটেকশন ব্যবস্থা। কিন্তু বৈদ্যুতিক কারণে আগুনের সূত্রপাত প্রতিরোধের বিষয়ে আজও সচেতনতা ও সতর্কতার অভাব আছে। বৈদ্যুতিক কারণে আগুনের সূত্রপাত প্রতিরোধে সচেতন হওয়া খুব জরুরি।
আমরা না জানার কথা নয় যে, ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। বিদ্যুতের কারণে চলমান সমস্যা সম্পর্কে উদ্বেগ না থাকায় দৈনন্দিন পরিদর্শন এবং পরীক্ষা প্রতিনিয়ত আমরা উপেক্ষা করে চলেছি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ভবনের ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিতে সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা ভবন মালিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলেও তাঁরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন নন। অসমর্থ ব্যক্তির অনভিজ্ঞ পরামর্শে আস্থা রাখায় সৃষ্টি হয় গুরুতর দুর্ঘটনা। ইনডোর সাবস্টেশন রুমের আদ্রতা নিয়ন্ত্রণে রুমের আশপাশে গাছ লাগানোকে নিরুৎসাহী করা হলেও আমরা আদ্রতা এমনকি ধূলিকণা বিবেচনায় নিই না। ২০ বছরের অধিক সেকেলে ওয়্যারিং আজকের বৈদ্যুতিক লোড নেওয়ার ক্ষমতা রাখে কি না, তা ভাবার অবকাশ কোথায়? এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। শুধু বিদ্যুৎ বিভাগ নয়, যারা ঘরের মালিক, মার্কেটের বা দোকানের কর্তৃপক্ষ তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে দোকান তথা জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য যথাযথভাবে বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন ও তদঅনুযায়ী আনুষাঙ্গিক উপকরণ ব্যবহারের। নচেৎ আগুন সংকট থেকে উত্তরণের কোর পথ নেই।