বেড়িবাঁধ কেটে চিংড়ি চাষ!

29

কক্সবাজার সদরের পোকখালী ইউনিয়নে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ দখল করে যত্রতত্র বাঁধ কাটছে চিংড়ি ঘের মালিক ও প্রভাবশালীরা। এতে উপকূলীয় এলাকার অসংখ্য পরিবার ও জনপদ সামুদ্রিক বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে।
চৌফলদন্ডী থেকে পোকখালী হয়ে গোমাতলী পর্যন্ত অন্ততঃ পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ কেটে চিংড়ি ঘেরে জোয়ারের পানি ঢুকানো হচ্ছে। আর এতে বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছে জনপদ ও জনবসতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে এসব বেড়িবাঁধ কাটার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, গত এক মাস ধরে চিংড়ি ঘেরের প্রভাবশালীরা নির্ভয়ে বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্ট কেটে চিংড়ি ঘেরে পানি ঢুকাচ্ছে।
পোকখালী ইউনিয়নের উপকূলীয় মালমুরা পাড়ার বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি ফরাজী ঘোনা, নতুন ঘোনা, কামিজ্জিঘোনা, রশিদের ঘোনা ও গোমাতলী দক্ষিণের ঘোনা চিংড়ি প্রজেক্টে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি ঢুকানোর জন্য বেড়িবাঁধ কেটে দিয়েছে এসব চিংড়ি ঘের ইজারাদাররা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ৬/৬৩ নং পোল্ডারের এস ফাইভ ও এস টেন ¯øুইস গেইটের মধ্যবর্তী স্থানে সরকারি বেড়িবাঁধের প্রায় ১০ গজ দৈর্ঘ্যের বাঁধ কেটে ফরাজী ঘোনা প্রজেক্টে জোয়ারের পানি ঢুকাচ্ছে। এছাড়াও এর দক্ষিণে নতুন ঘোনা চিংড়ি প্রজেক্টেও বেড়িবাঁধের দুই পয়েন্ট কাটা হয়েছে। রশিদের ঘোনা, গোমাতলী দক্ষিণ ঘোনা, কামিজ্জি ঘোনায়ও হাফ ডজন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী ৪/৫ টি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে বন্যা আতংক বিরাজ করছে।
৬/৬৩ পোল্ডারের আওতাধীন পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন দল (ওয়ামিপ) সভাপতি হান্নান মিয়া বলেন, সাগরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে কাটা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে আশপাশের সব গ্রাম প্লাবিত হতে পারে। ভাঙ্গন বড় হয়ে গেলে এলাকার সব চিংড়ি ঘের ও ৮/১০ টি গ্রাম সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
ফরাজী ঘোনা সংলগ্ন বাঁশখালীয়া পাড়ার বাসিন্দারা বলেন, উক্ত বেড়িবাঁধ তাদের চলাচলের একমাত্র পথ। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় স্থানীয় বাজার ও জেলা শহরের সাথে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

এলাকাবাসী জানান, বেড়িবাঁধ কেটে ফেলার পর স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রজেক্ট মালিক ও ইজারাদারদের বাঁধার মুখে তা আর সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, প্রভাবশালীরা বিভিন্নস্থানে সরকারি বেড়িবাঁধ কেটে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও জনবসতিকে হুমকির মুখে ফেললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাগণ নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কার্য সহকারী রশিদ আহমদ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব বেড়িবাঁধ কাটার সুযোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বেড়িবাঁধ দখলকারীরা।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী ও ওই পোল্ডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রশিদ আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বেড়িবাঁধ কাটার ব্যাপারে আগে জানতেন না বলে দাবি করেন। উক্ত রশিদ প্রায় ৮ বছর বদলীবিহীন অবস্থায় কক্সবাজারে চাকরিরত থাকায় এসব অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী।

তিনি জানান, তারা সরেজমিন বিষয়টি পরিদর্শন করেছেন। যেসব লোক বেড়িবাঁধ কাটার কাজে জড়িত তাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করানো হয়েছে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।