বেড়ালের গল্প জান্নাতা

59

বাংলাদেশের খ্যাতিমান ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন শ্রদ্ধেয় গল্পকারের “বেড়ালের গল্প” বই নিয়ে কিছু কথা উপস্থাপন করতে চাই প্রিয় বন্ধুরা।
বেড়ালের গল্প বইটি মূলত পৃথিবীর সকল প্রাণীকে উদেশ্য করে লেখা হয়েছে। বইতে বেড়ালের প্রাধান্যটা’ই বেশি, কারণ বইটির পাতা জুড়ে শুধু বেড়ালের’ই আহ্লাদ। “পৃথিবীতে যেমন মানুষের বসবাসের অধিকার রয়েছে তেমনই অধিকার রয়েছে ছোট্ট গুবরে পোকারও।” তাই আমরা মানুষ হিসেবে কোন প্রাণীকে অবজ্ঞা করতে পারি না। তাদের বিপদে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। লেখকের লেখায় খুব সাবলীল ভাবে ভাবানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। লেখকের কল্পনার জগতে বেড়াল থাকলেও এখন বাস্তবে বেড়ালের সাথে তাঁর বসবাস। একটি বেড়ালের প্রতি লেখকের
এতো ভালোবাসা বইটি না পড়লে হয়তো বুঝতেই পারতাম না। নিত্যদিনই বেড়ালের সাথে আমার ওঠাবসা। কিন্তু “বেড়ালের গল্প” বইটি পড়ে বেড়ালের প্রতি আমার ভালোবাসা দ্বিগুণ হয়ে গেছে সেই সাথে অন্য পশুপাখিদের প্রতিও।
বেড়ালের গল্প’ বইটিতে একজন চরিত্র রয়েছে। চরিত্রটি হচ্ছে সারাবাড়ি দাবড়িয়ে বেড়ানো “কিটক্যাট” ওমা কিটক্যাট আবার কে? জ্বি কিটক্যাট হচ্ছে ছোট্ট এক তুলতুলে বেড়াল ছানার নাম। লেখকের মেয়ে “সাবরিনা নদী” ২০১৭ সালে আমেরিকার হিস্টনের একটা এনিমেল শেল্টার থেকে কিটক্যাট নামের সাত মাস বয়সী বেড়াল ছানা নিয়ে আসেন। শেল্টারে বেড়াল ছানাগুলো শেখে যত্রতত্র টয়লেট করতে নেই। শেখে নম্রতা ভদ্রতা।
বিপর্যস্ত হাজার হাজার কুকুর বেড়ালের আশ্রয়স্থল এই শেল্টার। শেল্টারে থেকে তারা অপেক্ষা করে কুকুর এবং বেড়াল প্রিয় কোন পরিবারের। তেমনই অপেক্ষায় ছিল কিটক্যাট। একটি হাস্যজ্জল পরিবার পেয়ে আনন্দের অন্ত ছিল না তুলতুলে বেড়াল ছানাটার।
লেখকের মনে বেড়ালকে নিয়ে একপ্রকার সংশয়
বাসা বেধেছিল । কারণ তিনি একদিন একটি বেড়াল ছানাকে বাড়ির দোতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে ছিলেন। তিনি মনে করেন সেজন্য বেড়ালরা তাঁকে দেখে ভয় পায়। দেখা মাত্রই ছুট লাগায়। এই ভাবনায় লেখক সমস্ত বেড়ালদের নিয়ে ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে “ছোটদের কাগজ” নামে পত্রিকাটি পুরোটায় বেড়াল সংখ্যা বের করেছিলেন। সংখ্যাটি বেড়ালদের উপহার দিতে পেরে লেখক ধন্য হয়েছেন। বেড়ালকে নিয়ে খ্যাতিমানদের লেখা শোভা পেয়েছে বইটিতে। যাতে বেড়ালদের মনে আর কোন অভিমান বা রাগঢাক না থাকে, তাদের অভিমান ভাঙাতে এই আয়োজন। এছাড়াও বেড়াল নিয়ে লুৎফর রহমান রিটনের অসংখ্য ছড়া, কবিতা রয়েছে। আস্ত একটা উপন্যাসও রয়েছে “টোকাই আমিন টোকাই” নামে।
এভাবে আস্তে আস্তে বেড়ালরা জায়গা করে নিয়েছে লেখকের মনান্তরে।
পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ আছেন যারা বেড়াল প্রেমী। বেড়ালকে নিয়ে ঘুমায়, বেড়ালকে নিয়ে খায়। বেড়াল তাঁদের কাছে অনেক প্রিয়।
এছাড়াও অনেক মানুষ আছে যারা বেড়াল দেখলে ভয় পায়। লাঠি নিয়ে তাড়াতে উদ্যত হয়।
সকলের চোখ খুলে দিতে লেখক লিখেছেন তাঁর অভিজ্ঞতার বাণী——-আদিকাল থেকে দাদা, দাদী,খালা, চাচীরা বলে আসছেন বেড়াল একটা চোর। চুরি করে সব খাবার খায়! কত্তবড় মিথ্যা বচন বেড়ালের নামে!
দেখেছেন? আমরা মানুষ হয়ে বেড়ালকে কত্তবড় অপবাদ দিচ্ছি! আমরা মানুষ আমাদের বোধবুদ্ধি আছে। নিজের খাবার নিজে তৈরি করে খেতে পারি। কুকুর বেড়ালরা তো খাবার তৈরি করতে পারে না। তাহলে কি তারা না খেয়ে মরবে? আশ্চর্য! আমরা কি একমুঠো খাবার দিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারি না? আমরা তা না করে বেড়ালকে চোর সাব্যস্ত করে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করি। লোকে বলে বেড়ালের হাড্ডি খুব শক্ত যতই মারো ওদের লাগে না। ওরা মাছ খায় না মাছের কাঁটা খায়। এটাও মিথ্যা বোঝানো হয়েছে আমাদের।
বিশ্বাস করেন, মানুষের মত বেড়ালেরও মন খারাপ হয়। তারা মিঁয়্যাও মিয়্যাও করে কেঁদে প্রকাশ করে ওদের কষ্ট। ওরাও অসুস্থ হয়। ওদের দেহ খুব নরম তুলতুলে। মারলে ওদের লাগে। মানুষ তুমি যদি পশুপাখির ভাষা বুঝতে!
লেখকের পরিবারে কিটক্যাট নামের বেড়ালটি তাঁদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। পরিবারের সবাই কিটক্যাটকে সংক্ষপে “কিটো” বলে ডাকে। ছোট থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে বাবা মায়ের আদরে (নদী এবং ডেভিডকে ‘লেখকের মেয়ে জামাই’ কিটো তাঁদের বাবা মা মনে করে)। তাদের কাছে শিখেছে নম্রতা ভদ্রতা। কিন্তু কখনও চুরি করতে শেখেনি। চুরি কিভাবে করে কিটো জানে না। কারণ কিটোর চুরি করার প্রয়োজন হয় না।
খাবার সব সময় দেওয়া থাকে। কিন্তু আমরা বেড়ালের ভয়ে খাবার লুকিয়ে রাখি। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য না করতে পেরে বেড়ালরা চুরি করতে বাধ্য হয়।
বেড়ালরা সারাদিনে চৌদ্দ/ষোল ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটায়। একটানা নয়, এক ঘন্টা আধা ঘণ্টা করে ঘুমায়। বেড়ালরা বাকশো কিংবা জুতোর মধ্যে ঢুকতে ভালোবাসে। বেড়ালরা কাল্পনিক ভাবে কথা বলতে পারে। আমি দেখেছি একজন লেখকের সাথে বেড়ালকে কথা বলতে কি আশ্চর্য! তারা মানুষের কাছে তাদের মন খারাপের অনুভূতি প্রকাশ করে।
আসুন, আমরা সমস্ত পশুপাখিকে ভালোবাসতে শিখি। তাদের অকারণে হত্যা না করি। পশুপাখিদেরও রোগ-শোক হয়। তাদের ভ্যাকসিন, এবং নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। মানুষ হয়ে যদি তাদের সাহায্য করতে না পারি তাহলে ওদের মেরে ফেলার কোন অধিকারও আমাদের নেই!
বেওয়ারিশ ঘুরে বেড়ানো কুকুর বেড়ালদের এক মুঠো খেতে দিয়ে সাহায্য করলে হয়তো আমাদের কোন ক্ষতি হবে না। বিনিময়ে ওদের প্রাণ বাঁচবে। বেঁচে থাকার স্বস্তি পাবে। পশুপাখির ভালোবাসা যে বোঝে না সে অধম! ‘বেড়ালের গল্প’ বইটি আমাকে এভাবে মুগ্ধ করেছে। বইটি পড়ে শিখেছি কিভাবে সকল প্রাণীকে ভালোবাসতে হয়। লেখকের কাছে এমন মননশীল শিক্ষণীয় লেখার প্রত্যাশা সবময়।
প্রিয় কিশোর কিশোরী বন্ধুরা, তোমাদের প্রিয় বইটি পেতে জনপ্রিয় ‘ঝিঙেফুল’ প্রকাশনীতে খোঁজ নাও। বইটি পড়লে লেখকের মত মন তোমাদেরও তৈরি হবে আশা রাখি।