বেহাল অবস্থা বাঁশখালীর অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর

88

বাঁশখালীর খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সামনের তিন রাস্তার মোড়ে হাঁটু পরিমাণ পানি জমা থাকে। এ পানি মাড়িয়েই চলাফেরা করছে এলাকার মানুষ ও যানবাহন। পানি জমে থাকা অংশের পাশেই আছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। পরিষদের সামনে এভাবে পানি জমে থাকলেও সড়কটি সংস্কারে দীর্ঘদিনেও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরিষদ এলাকা থেকে প্রেমাশিয়া যাওয়ার সড়কটির অবস্থাও ভঙ্গুর। এ ইউনিয়নের ছোটবড় কমপক্ষে পাঁচটি সড়কের বেহাল অবস্থা।
শুধু খানখানাবাদ ইউনিয়ন নয়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর এমন ভঙ্গুরদশা। এসব এলাকার কমপক্ষে ৩০টি ছোটবড় সড়কে প্রতিনিয়ত জমে থাকে পানি। অনেক সড়ক কাদায় ভরপুর। ব্রিক সলিং সরে গিয়ে কিছু সড়কের অবস্থা নাজুক। কার্পেটিং সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভূঁইয়া পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাঁশখালীতে এলজিইডির অধীনে শতাধিক সড়ক আছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৫টির মতো সড়কের প্রকল্প কাজ চলমান আছে। আরো প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা সড়ক মেরামতের জন্য চাওয়া হয়েছে। কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কাজ করলেও তা পুনরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের ভেতরের ছোটখাট সড়কগুলো এডিপি ও উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ থেকে স্থানীয়ভাবে করা হয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, খানখানাবাদ ইউনিয়নের ঈস্বরবাবুর হাট এলাকা থেকে শঙ্খ নদীর পাড় ঘেঁষে যাওয়া প্রেমাশিয়া পর্যন্ত সড়কটি কাদায় ভরা। বিকল্প যে পথটি রয়েছে তার কিছু অংশ কার্পেটিং থাকলেও বাকিপথ পানিতে ডুবে থাকে। জীর্ণশীর্ণ এ পথ পাড়ি দিয়ে প্রেমাশিয়ার মানুষ চলাফেরা করে। বাহারছড়ার মোশাররফ আলী হাট এলাকা থেকে খানখানাবাদ সাগরতীর পর্যন্ত সড়কটির অবস্থাও নাজুক। বাহারছড়া ইউনিয়নের ছোটবড় সবগুলো সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। অথচ এ ইউনিয়নেই সরকারের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বেশি। রতœপুরের তৈয়ব মাঝি দিঘি এলাকার বদি বর বাড়ি সড়কটি কাদামাটিতে ভরপুর। একইভাবে কাথরিয়া মৌলভী মনছফ আলী মাজার থেকে আশরাফ আলী সড়কটি বেয়ে কাদার কারণে পথচলা দুষ্কর। এই এলাকায় থাকা একমাত্র সাইক্লোন শেল্টারে দুর্যোগকালীন মানুষকে যেতে নাকাল অবস্থায় পড়তে হয়। কাথরিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড থেকে ৭নং ওয়ার্ড ঘিরে থাকা চুনতি বাজার থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কে পথচলা মুশকিল। এ সড়কে মানুষের চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে। সাধনপুর ইউনিয়নের জেলেপাড়া সড়কটির অবস্থা দেখলে বুঝা যাবে না সেখানে মানুষের বসবাস আছে। জলকদর খালে ভেঙে গেছে সড়ক। বিকল্প ব্রিক সলিং করা যে সড়কটি আছে সেটিও খানাখন্দে ভরপুর। সরল ইউনিয়নের ভেতরের সড়কগুলোর অবস্থাও খারাপ।
কালীপুর মোহাম্মদ দিঘির পাড় থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়া কার্পেটিং সড়কটির অবস্থা বেহাল। এ সড়কের কার্পেটিং উঠে গেলে নতুন করে সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। একইভাবে পালেগ্রাম সড়কের অবস্থাও ভয়াবহ। গুনাগরী থেকে মোশাররফ আলী বাজার সড়কটি সম্প্রতি সংস্কার করা হলেও আবারো খানাখন্দে ভরে গেছে। বৈলছড়ি বাজার থেকে পূর্বদিকের সড়কটি ভেঙে গেছে। একই অবস্থা হাবিবের দোকান থেকে পূর্বদিকে বয়ে যাওয়া কালীবাড়ি সড়কের অবস্থা। পশ্চিম চাম্বল ১নং ওয়ার্ডের ডেপুটি ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংযোগ সড়কটি কাদামাটিতে ভরপুর। এ পথ মাড়িয়ে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষার্থীদের পথ চলতে হয়।
পৌরসভার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। প্রতিটি ওয়ার্ডের সড়কগুলো চলাফেরার অবস্থা নেই। সড়কের অবস্থা দেখলে মনে হয় না পৌরবাসীর ট্যাক্সের টাকা উসূল হচ্ছে। তিনটি নির্মাণাধীন ব্রিজ নি¤œমানের কাজ করতে গিয়ে ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। চুড়ামনি পাড়া-কেবল মহাজন পাড়া সড়কটি ১৫ বছর আগে একবার সংস্কার হলেও এরপর আর হয়নি। এ সড়কে থাকা দুটি কালভার্ট ভেঙে গেছে। মহাজন পাড়ার অধিকাংশ সড়কের অবস্থা বেহাল। আস্করিয়া পাড়া সড়কটি দেখলে মনে হবে এটি পৌরসভার অংশ নয়। মিয়ার বাজার থেকে হারুন বাজার সড়কটির অবস্থা ভাঙাচোরা। দারোগা বাজার থেকে জালিয়াখালী বাজার সড়কটি ভেঙে চুরমার। শীলকূপ টাইম বাজার থেকে গন্ডামারা যাওয়ার সড়কটির মুখেই প্রতিনিয়ত পানি জমে থাকে। ছনুয়ার অধিকাংশ ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়কের অবস্থা নাজুক।
জানা যায়, বড় বড় কয়েকটি সড়ক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় থাকলেও বেশিরভাগ সড়ক উন্নয়নে কাজ করে উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় রাস্তাঘাট সংস্কারে বরাদ্দ দেয়া হলেও প্রতিনিয়ত এসব বরাদ্দের কাজে নয়ছয় হওয়ায় সড়কগুলোর দুর্ভোগ শেষ হয় না। সরকারের টিআর, কাবিখার বরাদ্দে কয়েকটি সড়ক সংস্কার করা হলেও সেখানেও দুর্নীতি হয়। যে কারণে অল্পদিনের মধ্যে কাজের কোন সুফল পাওয়া যায় না। দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় রাস্তাঘাট।
বাঁশখালী পৌরসভার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘রাস্তাঘাটের কি পরিমাণ বরাদ্দ হয় তা প্রশাসনে জমা থাকা কাগজপত্র দেখলেই বুঝা যাবে। প্রতিটি সড়ক ধরে দেখতে হবে কবে কোন সড়কে কাজ হয়েছে। তবেই বুঝা যাবে প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি হয় কিনা। নাকি সরকারের উন্নয়নে ঘাটতি আছে। পৌরসভার অবস্থা দেখলে মনে হয় এখানকার মানুষ ট্যাক্স দেয় না।’
খানখানাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা আনসার উল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, সরকার এত উন্নয়ন করছে। কিন্তু পশ্চিম বাঁশখালীর সড়কগুলো দেখলে উন্নয়ন হচ্ছে কেউ বলবে না। একশ্রেণির মানুষ উন্নয়নের নামে সব লুটেপুটে খাচ্ছে। বর্ষায় হয়তো সড়কের বেহাল অবস্থা চোখে পড়ছে। শুষ্ক সময়ে সড়কের উন্নয়নে নজর দিলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।