বেশধারীরা বেপরোয়া!

34

নগরীতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এসব চক্রের কোনও কোনওটি আবার বেপরোয়া হয়ে ভয়ঙ্কর প্রতারণা সংঘটিত করতেও পিছপা হচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে এসব চক্রের সদস্যদের বেশভূষা যেমন পাল্টে যাচ্ছে, তেমনি প্রতারণার ধরনও বিস্ময়কর রূপ নিচ্ছে। নগরজুড়ে প্রতারণার হাটে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিংবা আইন-শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাসহ নানা পেশার পরিচয়ে ভুয়া বা বেশধারীদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে নাগরিকদের অনেকেই অর্থ খুইয়েছেন। এবার মিলল ম্যাজিস্ট্রেট ও পেশকারের ভুয়া পরিচয়ধারী দম্পতির সন্ধান। এমনকি নারী চিকিৎসকের বেশধারী প্রতারকও পুলিশের জালে আটকা পড়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, প্রতারক তার স্বার্থ হাসিলে যে কোনও বেশ বা রূপ ধারণ ও সেই পরিচয়ে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে। প্রতারকদের অস্ত্র হচ্ছে প্ররোচনা। আর নাগরিকদের দুর্বলতা হলো অতিমাত্রায় লোভ আর অসচেতনতা। প্রায়শই প্রতারণা কিংবা ঠকবাজির অভিযোগ নিয়ে প্রতিকার পেতে নাগরিকরা আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু আসার পর ভুক্তভোগীর সাথে প্রাথমিক আলাপেই দেখা যায়, তারা প্রত্যেকের ঘটনার বিবরণ দিলেও অনেকের হাতেই বিশ্বাসযোগ্য কোনও প্রমাণ কিংবা ঘটনা-সংশ্লিষ্ট কোনও আলামতও নেই। এসব দুর্বলতার কারণে শেষপর্যন্ত মামলা করতে রাজি হন না। কেউ আবার প্রতারিত হওয়াটা নিজের জন্যই মানহানিকর বলে মনে করেন। অনেকে চাকরি, পদোন্নতি কিংবা বদলির জন্য উৎকোচ দেয়। কিন্তু তার বিপরীতে কোনও ডক্যুমেন্ট থাকে না। সেসব ক্ষেত্রে প্রতারক বা এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হয়ে যায়। নিজে সচেতন হলে আর ব্যক্তিগত লাভের জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন না করলে যে কারও পক্ষে প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগরীর আকবর শাহ থানার কর্নেলহাট এলাকায় একটি হারবাল পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে ভুয়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছেন দুই প্রতারক মিজান উল্লাহ সমরকন্দী (৩৮) ও তার সহযোগী ফারদিন আহমেদ (২৪)। এর মধ্যে মিজান নিজেকে আদালতের পেশকার বলে পরিচয় দেন। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তাদের প্রতারণামূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান মিজানের স্ত্রী ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পারভিন আক্তার (৩৫)। পরবর্তীতে তাদের মাধ্যমে ফাঁদ পেতেও ম্যাজিস্ট্রেটের বেশধারী ওই নারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
আকবর শাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, নগরীর কর্নেলহাট এলাকায় সাদা মাইক্রোবাস নিয়ে একটি হারবাল পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে ভুয়া পরিচয়ে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালাতে গিয়েছিল এই প্রতারক দল। ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়দানকারী পারভীন নিজে গাড়িতে বসে মিজান ও ফারদিনকে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পাঠায়। এ সময় তারা অভিযানের কথা জানিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেন।
মিজান পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে গিয়ে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাডাম বলেছেন ২০ হাজার টাকা দিলে অভিযান হবে না। তার এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে হারবাল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাদের পাঁচ হাজার টাকা দেন। কিন্তু ভুয়া পেশকার মিজান তা ফিরিয়ে দিয়ে ২০ হাজার টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। একপর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয় তাদের সঙ্গে। মিজান তখন ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে ধাক্কা দেন। সাথে সাথে সেখানে উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। এ সময় লোকজন মিজান ও ফারদিনকে ধরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে পারভীন আক্তার দ্রুত গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। এদের মধ্যে মিজান ও পারভিন পরস্পর স্বামী-স্ত্রী।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালী থানার নিউ মার্কেট এলাকা থেকে রুমা আকতার (২১) নামে এক ভুয়া নারী চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চাকরি পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে ফেলে অনেকের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, স¤প্রতি আবিদা বেগম (৩৪) ও শাহানুর বেগম সাবরিনা (২৯) নামে দুই নারী চাকরির সন্ধানে বের হলে রুমা আকতার তাদের চমেক হাসপাতালে চাকরি পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখান। এক পর্যায়ে তিনি নিজেকে চমেকের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে বিনিময়বাবদ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। চাকরিপ্রার্থী আবিদা বেগম বিষয়টি তার পরিবারকে জানান। ঘটনার দিন আবিদা বেগমের ভাগ্নে ফয়সাল বিন মান্নান ফোন করে রুমা আকতারকে নিউ মার্কেট এলাকায় আসতে বলেন। সন্ধ্যায় রুমা আকতার চিকিৎসক বেশে সেখানে এসে হাজির হন। এ সময় অন্য চাকরিপ্রত্যাশীরাও সেখানে হাজির হন। এসময় তাদের কাছে রুমার আচার-আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে রুমা পালানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে রুমাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রুমা আকতার ভোলার লালমোহন থানার গজায়রা এলাকার মো. রফিকের মেয়ে। শহরে তিনি কর্ণফুলী থানা এলাকার একটি কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন।