বেণীমাধব বড়ুয়া (১৮৮৮-১৯৪৮)

50

বেণীমাধব বড়ুয়া শিক্ষাবিদ, লেখক। ১৮৮৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মহামুনি গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা রাজচন্দ্র তালুকদার ছিলেন একজন কবিরাজ। বেণীমাধব বাল্যকালেই পারিবারিক ‘তালুকদার’ পদবী ত্যাগ করে ‘বড়ুয়া’ পদবি গ্রহণ করেন। তিনি গ্রাম্য মডেল স্কুল থেকে মিডল ইংলিশ (এম.ই), চট্টগ্রাম সরকারি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৯০৬) এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফএ (১৯০৮) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্ট কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে পালিতে অনার্সসহ বিএ (১৯১১) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (১৯১৩) ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়াও তিনি কলকাতা ল’ কলেজ থেকে আইনের প্রথম পর্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
বেণীমাধব ১৯১২ সালে শিক্ষাজীবনের মাঝখানে অর্থসঙ্কটে পড়ে স্বগ্রামের মহামুনি অ্যাংলো-পালি ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক পদে চাকরি শুরু করেন। পরে ১৯১৩-১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শ্রেণির প্রভাষক ছিলেন। ১৯১৪ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত যান। সেখানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিকসের তত্ত¡াবধানে গবেষণা করে তিনি গ্রিক ও আধুনিক ইউরোপীয় দর্শনে এমএ এবং বৌদ্ধশাস্ত্র ও ভারতীয় দর্শনে ডিলিট (১৯১৭) ডিগ্রি লাভ করেন।
দেশে ফিরে বেণীমাধব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং এমএ শ্রেণির পালি পাঠক্রমের সংশোধন ও পরিবর্ধন করেন। ১৯২০ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং আমৃত্যু ওই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পালি বিভাগ ছাড়াও বেণীমাধব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ (১৯১৯-৪৮) এবং সংস্কৃত বিভাগের (১৯২৭-৪৮) সঙ্গে সস্পৃক্ত ছিলেন। তিনি স্ব-উদ্যোগে বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম এবং শিলালিপি বিষয়েও অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করেন।
বেণীমাধব বহু গ্রন্থ ও গবেষণা নিবন্ধ রচনা করেন। তাঁর প্রথম গ্রন্থ মূল পালিসহ লোকনীতির বঙ্গানুবাদ বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার বার্ষিক কার্যবিবরণীতে (১৯১২) প্রকাশিত হয়। তাঁর ডিলিট থিসিস অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ চৎব-ইঁফফযরংঃরপ ওহফরধহ চযরষড়ংড়ঢ়যু (১৯২১) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে: অ চৎড়ষবমড়সবহধ ঃড় ধ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ইঁফফযরংঃ চযরষড়ংড়ঢ়যু (১৯১৮), ঞযব অলরারশধং (১৯২১), চৎধশৎরঃ উযধৎসধঢ়ধফ (শৈলেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে যৌথভাবে), ঙষফ ইৎধযসর ওহংপৎঢ়ঃরড়হং রহ ঃযব টফধুধমরৎর ধহফ কযধহফমরৎর (১৯২৬), ইধৎযঁঃ ওহংপৎরঢ়ঃরড়হ (গঙ্গানন্দ সিংহের সঙ্গে যৌথভাবে), এধুধ ্ ইঁফফযধ এধুধ (১ম খন্ড ১৯৩১, ২য় খন্ড ১৯৩৪), অংড়শধ ধহফ ঐরং ওহংপৎরঢ়ঃরড়হং (১৯৪৬), ইৎধযসধপযধৎর কঁষধফধহধহফধ ধহফ ঐরং এঁৎঁ ইরলধুধ কৎরংযহধ এড়ংধিসর (১৯৩৮), ঈবুষড়হ খবপঃঁৎব (১৯৪৫), ঝঃঁফরবং রহ ইঁফযরংরস (১৯৪৭), চযরষড়ংড়ঢ়যু ড়ভ চৎড়মৎবংং (১৯৪৮) ইত্যাদি। বাংলায় তাঁর মৌলিক ও অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে মধ্যম নিকায় (১ম খন্ড, ১৯৪০), বৌদ্ধ গ্রন্থকোষ (১ম খন্ড, ১৯৩৬), বিশুদ্ধিমার্গ (অপ্রকাশিত) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাঁর শতাধিক প্রবন্ধ ও বক্তৃতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
অধ্যাপক বড়ুয়া জড়ুধষ অংরধঃরপ ঝড়পরবঃু ড়ভ ইবহমধষ-এর ঋবষষড়,ি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য, কলকাতার মহাবোধি সোসাইটি ও ইরান সোসাইটির কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ওহফরধহ ঈঁষঃঁৎব, ইঁফফযরংঃ ওহফরধ, জগজ্জ্যোতি ও বিশ্ববাণী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রীলঙ্কা থেকে তাঁকে ‘ত্রিপিটকাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় তিনি পরলোক গমন করেন। সূত্র : বাংলাপিডিয়া