বেণীমাধব বড়ুয়া ছিলেন বঙ্গীয় রেনেসাঁর অন্যতম প্রাণপুরুষ

109

ড. বেণীমাধব বড়ুয়া বঙ্গীয় রেনেসাঁর অন্যতম প্রাণপুরুষ। জ্ঞানের জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি শুধু চট্টগ্রামের নয় সমগ্র বাঙালির গর্ব ও অহংকার। প্রাচীন ভারত-বাংলার ইতিহাস-দর্শন গবেষণায়-রচনায়, প্রাচীন শিলালিপির পাঠোদ্ধারে তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। এশিয়াবাসীদের মধ্যে তিনিই প্রথম লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট. ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি প্রাকবৌদ্ধ ও বৌদ্ধদের প্রাচীন ইতিহাস-দর্শন-সংস্কৃতি নিয়ে যে জ্ঞানচর্চা করেন তা কোন ধর্ম বা সাম্প্রদায়িক গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে পারে না। তাঁর গবেষণালব্ধ জ্ঞান ধর্ম-বর্ণ-অঞ্চলের সীমার উর্দ্ধে। অথচ আমরা তাঁকে ভুলে যেতে বসেছি। এক্ষেত্রে লেখক-গবেষক অধ্যক্ষ শিমুল বড়ুয়া বেণীমাধব চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এর আগেও তিনি বেণীমাধবের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম-কীর্তি নিয়ে একটি অসাধারণ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করে উভয় বাংলায় প্রশংসিত হয়েছেন। বিশ্ববিশ্রুত পন্ডিত বেণীমাধব চট্টগ্রামেরই সন্তান, চট্টগ্রাম সিটিতে কোন রাস্তা তাঁর নামে নামকরণ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর রচনাসমগ্র প্রকাশ, স্মারক বক্তৃতার আয়োজন, তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেন। গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ফুলকির এ.কে.খান স্মৃতি মিলনায়তনে সেন্টার অব এক্সেলেন্স ইন বুড্ডিস্ট স্টাডিজ এর উদ্যোগে সেন্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়–য়ার সভাপতিত্বে সংস্কৃতিকর্মী চম্পাকলি বড়–য়ার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, বেণীমাধবের উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের দায় হচ্ছে ভারততত্ত¡বিদ-প্রতœতত্ত¡বিদ-ইতিহাসবিদ ড. বেণীমাধবের মতো জ্ঞানসাধকের কর্মকীর্তি বর্তমান প্রজন্মকে জানানো। বেণীমাধব খুবই বাস্তববাদী, বিজ্ঞানমনস্ক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। ভাববাদ-আধ্যাত্মবাদের চেয়ে নৈতিক ও আদর্শভিত্তিক জীবন গঠনের লক্ষে তাঁর দৃঢ় অবস্থান ছিল। আজ দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বব্যাপী যেভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মতবাদ এবং জাতিগত-ধর্মগত-বর্ণগত সঙঘাত-সংঘর্ষে মানবতা রক্তাক্ত হচ্ছে- মানবতার এই দুঃসময়ে বেণীমাধবের মানবহিতচিন্তা, সমাজহিতৈষণা ও শান্তিপূর্ণ সমাজগঠনের সংস্কৃতির দর্শন অনুপ্রেরণাদায়ী হতে পারে। এজন্যে ড. বড়ুয়ার প্রাগ্রসর সমাজচিন্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা যেতে পারে। এধরণের প্রচেষ্টা সংঘাত প্রশমনে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই লেখক-গবেষক অধ্যক্ষ শিমুল বড়ুয়া গ্রন্থে অহিংসা ও মৈত্রীর ভুবন সৃজনে ড. বড়ুয়ার কাছে ফিরে যেতে আহব্বান করেছেন। বাংলাদেশের বিদ্বৎসমাজ ও গবেষকগণ ড. বেণীমাধবের মননশীল সৃষ্টিকর্মের প্রতি অনুরাগী হওয়া উচিত। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএসটিসি’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক এজাজ ইউসুফী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক কলামিস্ট সুভাষ দে, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর তুষার কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক শামসুদ্দীন শিশির। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার বড়ুয়া আনন্দ ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত শিল্পী প্রত্যাশা বড়ুয়া। সবশেষে অনুভূতি প্রকাশ করেন গ্রন্থের লেখক শিমুল বড়–য়া। বিজ্ঞপ্তি