বৃহত্তর চট্টগ্রামের নদীসমূহের খনন ও সংরক্ষণ জরুরি

22

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের উপর দিয়ে অসংখ্য নদী প্রবহমান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি নদীর প্রবাহ ও ভাঙ্গনরোধ ও সেচ সুবিধা নিয়ে ভাবছে পাউবি। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের অধীনে কর্ণফুলী, মাইনী, হালদা, (সাঙ্গু), মাতামুহুরী, ইছামতিসহ আরো কিছু ছোটখাট খাল খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সমীক্ষা করছে। যা দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার খবরে বিস্তারিত ওঠে এসেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডবিøউএম) নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাতে খাল ও নদী খনন ও সংরক্ষণ বিষয়ে সমীক্ষাকার্য পরিচালনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় পাউবো। প্রতিষ্ঠানটি সম্ভাব্য যাচাই কাজ নিয়মিত করে যাচ্ছে। এ যাচাই বাছাইয়ের কাজ বর্তমানে শেষের পথে। নদীতে ড্রেজিং ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে তাদের এ সমীক্ষার পর দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী কর্ণফুলীর ড্রেজিং কার্যক্রম দ্রæত বাস্তবায়নের পাশাপাশি মাইনী, হালদা, শঙ্খ, মাতামুহুরী, ইছামতি নদীর ড্রেজিং ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত কাজ বাস্তবায়িত হওয়া জরুরি।
বর্তমানে দেশের নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক অস্থিত্ব হারাতে বসেছে। কর্ণফুলীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। কর্ণফুলী দেশের সেই গুরুত্ববহ নদী যার নাব্যতা, প্রবাহ ও কার্যকারিতার উপর দেশের ৮০ শতাংশ রাজস্বনির্ভর করছে। এ নদীর বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন পতেঙ্গায় দেশের বৃহত্তম এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত।
আন্তর্জাতিক চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। চট্টগ্রাম বন্দরকে কার্যকর রাখতে নদীর তীরে স্থায়ী বাঁধ, ড্রেজিং, কার্যক্রম দ্রæত সম্পন্ন করা জরুরি। অন্যদিকে হালদা উপনদী হলেও জাতীয়ভাবে এর গুরুত্ব কম নয়। হালদা দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস প্রজননের নদী, রুইজাতীয় মাছ তথা রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাইশ ইত্যাদি মাছ হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে। হালদাকেন্দ্রিক মাছের পোনা দেশের মিঠা পানির পুকুরে মৎস চাষকে সমৃদ্ধ করে দেশের মাছের চাহিদা মিটিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে। সুতরাং, হালদা সংরক্ষণের উদ্যোগও অনস্বীকার্য। এর পরে আসে শঙ্খ নদীর কথা। দেশের উৎপন্ন বৃহত্তম ও দীর্ঘ নদী শঙ্খ। এ নদীতে চারটি ব্রীজ নির্মিত হয়েছে। যার কারণে বিভিন্ন স্থানে চর সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া শঙ্খ নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় জোয়ার ভাটা রয়েছে। নদীর এ অংশে বর্ষাকালে তীব্র ভাঙনে শত শত পরিবার বাস্তুহারা হচ্ছে। যে কারণে শঙ্খ নদীতে ড্রেজিং খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তার সাথে সাথে যেসব স্থানে ভাঙ্গনের ফলে মানুষ ভিটেবাড়ি হারা হচ্ছে তাদের রক্ষার্থে বেড়িবাঁধের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থাও প্রয়োজন। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ছয়টি নদীসহ জরিপকৃত খালসমূহের খনন, রাবার ডেম, বাঁধ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া দ্রæততর করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও দেশের অর্থনীতিতে আরো ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করা জরুরি। পাউবোর উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সকলকে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সাথে কাজ করতে হবে। আমরা প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ অপচয় চাই না, চট্টগ্রামের ছয় নদীসহ খালসমূহের প্রকৃত উন্নয়ন চাই।